‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন ইলন মাস্ক

বাসস
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৭

ঢাকা , ৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের  সাবেক মিত্র ইলন মাস্ক শনিবার বলেছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, যাকে তিনি দেশের ‘একদলীয় ব্যবস্থা’র বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দাতা মাস্ক, তথাকথিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে সরকারি ব্যয় ও ফেডারেল চাকরি কমানোর রিপাবলিকান প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন। এরপর থেকেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার তিক্ততা শুরু হয়। 

ট্রাম্পের বিশাল অভ্যন্তরীণ ব্যয় পরিকল্পনা নিয়ে মাস্কের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। মাস্ক বলেন, এই পরিকল্পনা মার্কিন ঋণকে ‘বিস্ফোরিত’ করে তুলবে এবং যেসব আইন প্রণেতা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের পরাজিত করতে তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন। 

সেজন্য তিনি নিজেই ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। যার মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছেন।

স্পেসএক্স ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক, নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, ‘আমাদের দেশকে অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেউলিয়া করার বিষয়ে বললে, আমরা গণতন্ত্রে নয়, একদলীয় ব্যবস্থায় বাস করছি। আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হয়েছে আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।’

ইলন মাস্ক  এক  জরিফের  ফলাফল শুক্রবার ৪ জুলাই করা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে এক্স-এ প্রকাশ করেছিলেন— যেখানে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, উত্তরদাতারা কি দ্বি-দলীয় (বা কারও মতে একদলীয়) ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা চান? হ্যাঁ-না ভিত্তিক এই জরিপে ১২ লক্ষের বেশি প্রতিক্রিয়া আসে। সেখানে ২:১ ব্যবধানে আপনারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল চেয়েছেন এবং আপনারা সেটি পেতে চলেছেন। শনিবার মাস্ক এমনই ঘোষণা দেন।

তিনি আরও একটি মেম শেয়ার করেন, যেখানে একটি দুই-মাথাওয়ালা সাপের ছবি ছিল এবং নিচে ক্যাপশন ছিল- একদলীয় ব্যবস্থার অবসান ঘটাও।

দুর্বল আইনপ্রণেতাদের টার্গেট করে ‘লেজার-ফোকাস’

এই নতুন দল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন কিংবা তার দুই বছর পরের প্রেসিডেন্সিয়াল ভোটে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো অনিশ্চিত।  

ট্রাম্প-মাস্ক বিরোধ নতুন করে উত্তপ্ত হয় গত মাসের শেষ দিকে, যখন ট্রাম্প কংগ্রেসে রিপাবলিকানদেরকে চাপ দেন ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামক বিশাল ঘরোয়া ব্যয় পরিকল্পনা পাস করাতে।

মাস্ক এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন সেই রিপাবলিকানদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন।  তিনি একে ‘ঋণের দাসত্ব’ হিসেবে আখ্যা দেন ।

তিনি ঘোষণা দেন, তিনি এমন একটি রাজনৈতিক দল গড়বেন, যারা সেইসব আইনপ্রণেতাদের চ্যালেঞ্জ জানাবে। 
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিল আগামী দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতিতে অতিরিক্ত ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে।

ইলন মাস্ক বলেন, ‘আমি যদি এই পৃথিবীতে আর কিছু না করি, তাহলেও অন্তত এটা নিশ্চিত করব যে তারা যেন আগামী বছর প্রাথমিক নির্বাচনে হেরে যায়।’

যখন বিলটি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে পাস হয়ে আইনে পরিণত হয়, তখন ট্রাম্প মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহারের পাল্টা হুমকি দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী এবং ২০০২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া মাস্ককে সত্যিই বহিষ্কারের কথা ভাবছেন কি-না, জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

শুক্রবার, ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর, মাস্ক একটি রাজনৈতিক রণকৌশল প্রকাশ করেন। 

তিনি জানান, কয়েকটি দুর্বল হাউস ও সিনেট আসনে মনোযোগ দিয়ে কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাসে নির্ধারক শক্তিতে পরিণত হওয়াই তার লক্ষ্য।

মাস্ক এক্স-এ পোস্টে বলেন, ‘এটি কার্যকর করার একটি উপায় হচ্ছে মাত্র ২ বা ৩টি সিনেট আসন এবং ৮ থেকে ১০টি হাউস জেলার ওপর লেজার-ফোকাস করা।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দুই বছর অন্তর ৪৩৫টি হাউস আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটের ১০০ সদস্যের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকে প্রতি দুই বছর পরপর নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, তৃতীয় পক্ষের প্রচারণা সাধারণত ভোট ভাগ করে দেয়।  যেমন ১৯৯২ সালে ব্যবসায়ী রস পেরটের স্বাধীন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতা  রিপাবলিকান জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশের পুনঃনির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ডেমোক্র্যাট বিল ক্লিনটন এর বিজয় নিশ্চিত করে।

একজন এক্স ব্যবহারকারী মাস্ককে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘আপনি রস পেরোটের মতো আচরণ করছেন, আর সেটা আমার ভালো লাগছে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নতুন বাংলাদেশ গড়তে ন্যায়বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান জরুরি : নাহিদ ইসলাম
নদীতে গোসল করতে নেমে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
ডিএমপির কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলো তাজিয়া মিছিল
ভূঁইফোড় সংগঠন বিষয়ে সর্তক করলো বিএনপি 
যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন মাখোঁ, ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্ক ‘পুনরুদ্ধারে’ মনোযোগী স্টারমার
মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে তথ্য উপদেষ্টার শোক
ব্রিকস সম্মেলনে ‘ট্রাম্পের শুল্কনীতির’ বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো
সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালিত 
নওগাঁয় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ
দেশে আরো ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত 
১০