ঢাকা, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে তাদের স্মরণে ‘এক শহিদ এক বৃক্ষ’ কর্মসূচির আওতায় আজ সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন ফলদ, ঔষধি, বনজ ও শোভাবর্ধনকারী গাছ রোপণ করা হয়। এ কর্মসূচিতে প্রতিজন শহিদের সম্মানে একটি করে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে ‘এক শহিদ, এক বৃক্ষ’ শীর্ষক এ কর্মসূচি গ্রহণ করে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ৬৪টি জেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে বন অধিদপ্তর সারাদেশে বৃক্ষরোপণ করে ।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে কুড়িগ্রামে ‘এক শহিদ এক বৃক্ষ কর্মসূচি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে জেলা প্রশাসক চত্বরে বৃক্ষ রোপণের মধ্যে দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা।
এ সময় পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, শহিদ নুর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুন, শহিদ আশিকের পিতা চাঁদ মিয়া, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ,সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসিবুর রহমান হাসিব, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট বজলুর রশীদ, জেলা এনসিপির সভাপতি মুকুল মিয়া, এবি পার্টির জেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
‘এক শহিদ এক বৃক্ষ কর্মসূচি’র আওতায় নেত্রকোণা জেলা শহরের বিএডিসি ফার্মের রাস্তায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও বনবিভাগের আয়োজনে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। জেলার ১৭ জন শহিদের স্মরণে ১৭ টি ফলজ,বনজ ও ওষুধি গাছ রোপণ করা হয়।
বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেত্রকোণা জেলার ১৭ জন শহিদের স্মরণে ১৭ টি গাছ রোপণ করা হয়েছে । প্রত্যেকটি গাছের সাথে শহিদদের নামাঙ্কিত ফলক থাকবে।’ এসময় জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, ১৭ জন শহিদ পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরায় জুলাই শহিদদের স্মরণে আজ সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলার ১০ জন শহিদের স্মরণে ১০টি বৃক্ষরোপণ করা হয়। মাগুরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাগুরার জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলাম। তিনি নিজ হাতে একটি বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাগুরার পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা ।
লক্ষ্মীপুরে এ উপলক্ষে আজ সকাল ১১টায় সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয়। জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার শহিদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৃক্ষরোপণ করেন। এসময় শহিদ সাব্বির হোসেন, শহিদ কাউছার হোসেন বিজয়, শহিদ ইউনুছ আল শাওন, শহিদ সাদআল আফনান ও পারভেজ হোসেনের নামে পাঁচটি বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এসময় অন্যান্যের মধ্যে শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
‘এক শহিদ এক বৃক্ষ’ কর্মসূচির আওতায় ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শহিদ সাইদুল ইসলাম শাহি ও শহিদ ওয়াকিল আহমেদ শিহাব স্মরণে দুইটি গাছের চারা রোপণ করা হয়। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইসমাইল হোসেন।
দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শহিদ সাইফুল ইসলাম আরিফ, শহিদ সরোয়ার জাহান মাসুদ ও শহিদ আবু বকর ছিদ্দিক স্মরণে একটি কৃষ্ণচূড়া, একটি জারুল ও একটি সোনালু ফুলের চারা রোপণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স. ম.আজহারুল ইসলাম। এ কর্মসূচিতে শহিদ পরিবারের সদস্য, জুলাই যোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলার সোনাগাজী, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রাঙ্গণে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রত্যেক শহিদ পরিবারের সদস্যদের দুটি করে গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়।
‘এক শহিদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরে জুলাই শহিদদের কবরের পাশে সোনালু বৃক্ষরোপণ করা হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার চন্দ্রা ইউনিয়নে দুই জন এবং পৌর এলাকার এক জনসহ তিন শহিদের কবরের পাশে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার আট উপজেলার ৩১ জন শহিদের কবরের পাশে গাছের চারা রোপণ করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পঞ্চগড়ের পাঁচ শহিদ স্মরণে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ আয়োজনে পঞ্চগড় ইকো পার্ক চত্বরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুমন চন্দ্র দাশ এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
পঞ্চগড় জেলার পাঁচজন বীর শহিদের নামে পাঁচটি গাছের চারা রোপণ করা হয়। শহিদ সাজু ইসলামের নামে রোপণ করা হয় নিম গাছ, শহিদ আবু ছায়েদের নামে কাজু বাদাম, শহিদ সাগর রহমানের নামে লটকন, শহিদ সুমন ইসলামের নামে জারুল এবং শহিদ শাহাবুল ইসলাম শাওনের নামে হরিতকী গাছের চারা রোপণ করা হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুমন চন্দ্র দাশ বলেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার বার্তাও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহিদেরা আমাদের কাছে কেবল নাম নয়, তারা সাহস ও মানবিকতার প্রতীক। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের পথ দেখায়। এই বৃক্ষগুলোও যেন ছায়া দেয়, ফল দেয়, আগামী প্রজন্মকে শিক্ষা দেয়। শহিদের নামের সঙ্গে গাছগুলো যতদিন থাকবে, ততদিন বেঁচে থাকবে তাদের গল্প, তাদের আদর্শ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের স্মরণে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ আজ দুপুরে নোয়াখালী পৌর এলাকার সোনাপুর ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কর্মসূচিতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপকূলীয় বন বিভাগ।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ নোয়াখালী সদর উপজেলার ৬জন, বেগমগঞ্জের ৯জন, সোনাইমুড়ীর ৬জন, হাতিয়ার ২জন, চাটখিলের ১জন, সেনবাগের ১জন ও কোম্পানীগঞ্জের ১জনসহ ২৬জন শহিদের স্মরণে ২৬ টি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জেলার ১৩ শহিদের নামে ১৩টি সোনালু প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
বৈষম্য বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে ১৩ শহিদ হলেন; সিরাজগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ পাড়া নিবাসী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রহমান রঞ্জু, কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল গ্রামের শিহাব উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ পৌরসভা গয়লার বিএনপি কর্মী সুমন সেখ ও আব্দুল লতিফ, সদর উপজেলার মেছড়া হাটপাড়ার জাহাঙ্গীর আলম, রায়গঞ্জ উপজেলার দুমরাই রুদ্রপুরের লেবু ও বারইভাগের নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র বেলকুচি উপজেলার বেতিল মাধবপুরের শিহাব আহম্মেদ ও বেতিল গোপরেখী দক্ষিণ গুমুখী গ্রামের সিয়াম হোসেন, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ঝাউপাড়ার ইয়াহিয়া আলী, কৈজরির অন্তর ইসলাম, রূপপুরের সুজন মাহমুদ ও নাগরদোলার মনিরুজ্জামান। শহিদ পরিবারের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ পরিবারের শহিদের নামে একটি করে বৃক্ষ রোপণ করেন।
‘এক শহিদ, এক বৃক্ষ’ স্লোগানে নারায়ণগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের আয়োজনে জেলার হাজীগঞ্জে অবস্থিত দেশের প্রথম ‘জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ প্রাঙ্গণে ২১ টি বকুল ফুলের গাছ রোপণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা শহিদ পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শ্রদ্ধা জানাতেই দেশজুড়ে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ কর্মসূচির আওতায় বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে ২১ জন শহিদের স্মরণে আজ ২১টি বকুল গাছ রোপণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই বকুল ফুলের সৌরভ যেন শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা আশা করি, শহিদদের স্বপ্নের সেই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আমরা একদিন গড়ে তুলতে পারব।
এছাড়াও সারাদেশের সংবাদদাতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খাগড়াছড়ি, ভোলা , সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, লালমনিরহাট, জামালপুরসহ দেশের আটটি বিভাগের সব জেলায় ‘এক শহিদ এক বৃক্ষ’ কর্মসূচির আওতায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।