ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও টেকসই সামাজিক উন্নয়নে মৎস্যখাত আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ’ উপলক্ষ্যে দেয়া আজ এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশের মৎস্যচাষী, উদ্যোক্তা ও মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্যখাতের অবদান অপরিসীম। চাষ পর্যায়ে লাগসই ও জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, উন্মুক্ত জলাশয়ে সহ-ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মিঠা পানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় এবং বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। এছাড়াও ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে প্রথম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। আমাদের মৎস্যখাতের এই অভাবনীয় সাফল্য বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মর্যাদাকে আরো সমুন্নত করেছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও মাছের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সমুদ্রে মৎস্যসম্পদ চিহ্নিতকরণ, পরিমাণ নির্ধারণ ও আহরণের লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরিকল্পিত সুনীল অর্থনীতিকেন্দ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা, মেরিন স্পেশাল প্লান প্রণয়ন এবং সমুদ্রে অবৈধ ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ বন্ধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি খাত হিমায়িত মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের যথাযথ মান নিশ্চিতে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন, মৎস্য পরিদর্শন এবং মাননিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামুদ্রিক টুনা ও সমজাতীয় মাছের বাণিজ্যিক আহরণের সম্ভাবনা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, মিঠা পানি ও আবদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদন আরো সম্প্রসারণে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে, মৎস্যখাতে বিনিয়োগ এবং ব্যবসা উন্নয়নের এই বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে টেকসই মৎস্যখাত বিনির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলে আরো নিষ্ঠার সাথে কাজ করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।