ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ডিজিটাল রূপান্তর, আইন প্রণয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। এসব উদ্যোগে নাগরিক সেবা সহজ হয়েছে, স্বচ্ছতা ও ভূমি খাতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘ভূমি অপরাধ দমন ও প্রতিকার বিধিমালা, ২০২৪’ এবং ‘ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫’ উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি বাজারমূল্যের সঙ্গে মিলিয়ে দলিলমূল্য নির্ধারণে নীতিগত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, যা কর ফাঁকি ও কালো অর্থের ব্যবহার কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভূমি সেবার ডিজিটালাইজেশনের আওতায় ই-মিউটেশন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, ভূমি রেকর্ড ও রেজিস্ট্রেশনসহ প্রায় ১০টি সেবা অনলাইনে চালু করা হয়েছে। এর ফলে নাগরিকরা ঘরে বসেই ভূমি সেবা গ্রহণ করতে পারছেন এবং অনিয়ম ও বিলম্ব অনেকটাই কমেছে।
ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নাগরিকের ই-রেজিস্ট্রেশন, ই-নামজারি, ই-পর্চা ও নকশা সরবরাহ, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন প্রদান, হট লাইন ও নাগরিক সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে ভূমিসেবা প্রদান ইত্যাদি।
ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমিসেবা প্রদানের পাশাপাশি ডিজিটাইজড ভূমিসেবাকে জনবান্ধব করার জন্য সারাদেশে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করেছে, যেমন- তেজতুরি বাজার মৌজায় ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে শতভাগ হোল্ডিং এন্ট্রি, দেশব্যাপী আয়োজিত ভূমি মেলা ২০২৫ এ অনলাইন ভূমি সেবার আয়োজন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূমি বিষয়ক উন্মুক্ত আলোচনা ‘মিট দ্যা সেক্রেটারি’, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্টেকহোল্ডার্স কনফারেন্স ইত্যাদি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি নাগরিক অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। মোট রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯৫ হাজারে। ই-নামজারি আবেদনের নিষ্পত্তি সময়সীমা ২৮ দিন নির্ধারণ করে দ্বিতীয় প্রজন্মের মিউটেশন সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা পাইলটিং শেষে সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।
ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ১ হাজার ৭৪৭টি খতিয়ান এবং ২১১১ একরের বেশি কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প সমাপ্তির আগেই ৬ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৬৬৪২ একরের বেশি জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট আদায় হয়েছে ১ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৬৭ কোটি টাকা বেশি। শুধু নামজারি খাতেই আদায় হয়েছে ৩৩৫ কোটি টাকা।
কল সেন্টার (১৬১২২) এর মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ লাখের বেশি সেবা প্রদান করা হয়েছে। প্রবাসীদেরও সেবা দেওয়া হয়েছে। চালু হওয়ার পর থেকে ৪০ লাখের বেশি নাগরিককে কল সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়েছে।
নাগরিক ভূমি সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২ হাজারের বেশি নাগরিক বিনামূল্যে সেবা নিয়েছেন। ই-পর্চা, নকশা ও ডাকসেবার মাধ্যমে ৫৩ কোটি টাকার সেবা প্রদান করা হয়েছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাইলট আকারে ৫টি ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র চালুর পর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় জুনের মধ্যে সারা দেশে ৪৮১টি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে নামজারি, ই-পর্চা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ও জমির নকশা প্রাপ্তির আবেদনসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিকরা এখন মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংক ও অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভূমি উন্নয়ন কর ও অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে পারছেন।
ভূমি সেবা জ্ঞানে জনগণকে সমৃদ্ধ করতে ‘স্মার্ট ভূমি পিডিয়া’ চালু করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই প্ল্যাটফর্মে নাগরিকরা ভয়েস টাইপিং বা কীওয়ার্ড দিয়ে প্রশ্ন করলে তাৎক্ষণিক উত্তর ও পরামর্শ পাচ্ছেন। এতে ব্লগ, ফোরাম ও চ্যাটবট সুবিধাও রয়েছে।