ঢাকা, ১২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি)।
গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫ অর্থবছর) এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা এ বছর ২.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় ডেপুটি গভর্নরবৃন্দ, বিএফআইইউ প্রধান, চিফ ইকোনমিস্ট, নির্বাহী পরিচালকসহ তফশিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহের গুরুত্ব বিবেচনা করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও কৃষিখাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।’
একই অনুষ্ঠানে কৃষি ও পল্লী ঋণ কার্যক্রম মনিটরিং ও নীতি প্রণয়নে সহায়তার জন্য ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাগ্রি-ক্রেডিট এমআইএস সফটওয়্যার উদ্বোধন করা হয়।
গভর্নর বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেকোনো পরিমাণ কৃষি ঋণ বা বিনিয়োগের জন্য সিআইবি রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করেছে এবং ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ও গ্রামীণ ঋণের জন্য সিআইবি রিপোর্টিং সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ মওকুফ করেছে।
এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক পশুপালন খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করেছে এবং সেচ ও কৃষিযন্ত্রপাতি খাতে ২ শতাংশ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা চালু করেছে।
তিনি আরও বলেন, অবস্থান এবং প্রকৃত চাহিদা অনুসারে ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বা কম ঋণ অনুমোদন করতে পারে।
ব্যাংকগুলোকে কৃষি ঋণ বিতরণ ও আদায় সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কৃত করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি এবং একটি টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষি ও গ্রামীণ খাতে সময়মতো পর্যাপ্ত তহবিল সরবরাহ অপরিহার্য।’
এসব নীতিমালা ও কর্মসূচিগুলো দেশের কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন গভর্নর।