পরিবেশ রক্ষার উদ্যমী কার্যক্রমের নেতৃত্বে জেসমিমার এগিয়ে চলা 

বাসস
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৮:৫২

ঢাকা, ২৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : দূষণমুক্ত বাংলাদেশ সবারই কাম্য। সে লক্ষ্যে তারুণ্যের ভূমিকাও সর্বাগ্রে এবং এটি গুরুত্বপূর্ণও বটে। কেননা তরুণরা সমাজের সবচেয়ে উদ্যমী ও সচেতন অংশ, যারা পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পরিবর্তন আনতে পারে। এমনই একজন আত্মপ্রত্যয়ী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণী জেসমিমা সাবাতিনা। 

পড়াশোনার পাশাপাশি তার নেতৃত্বগুণে তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন—পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড দিয়ে একজন নারী কীভাবে সমাজে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন—দুটোই বৃদ্ধি করতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ কেবল পরিবেশ সংরক্ষণেই নয় বরং নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ প্রতিটি জীবের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলে তো কথা-ই নেই। এখানকার মতো একটি দেশে পরিবেশ রক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ায়। পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন নারী নেতৃত্ব তৈরির পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও অর্জিত হয়। 

সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় পরিবেশ সচেতনতা ও জলবায়ু নিয়ে বর্তমান তারুণ্যেও মাঝে উজ্জ্বল জেসমিমা তুলে ধরেন তার পরিবেশ এক্টিভিস্ট হওয়ার গল্প। জেসমিমা পড়ছেন বেসরকারি ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। মিরপুরের বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে আশুলিয়া মডেল টাউনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার ক্লান্তি কখনও কাবু করতে পারেনি এই প্রত্যয়ী তরুণীকে। পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে তার কাজ এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ নজর কেড়েছে। তার অধ্যয়নের বিষয়ও পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।

বলছিলেন, আমার বিষয়টা এখন এমন যে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো—পরিবেশ নিয়ে পড়াশোনাও যেমন হলো, তেমনই বাস্তবিক কাজও হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে একজন পরিবেশবিদ হয়ে সমাজ ও দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখতে চান তিনি।  

জেসমিমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজধানীর মিরপুরে। বাবা এরই মধ্যে গত হয়েছেন। মা ও দুই বোন নিয়ে তার পরিবার। পড়েছেন মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে; সেখানে পড়াকালে পড়াশোনার পাশাপাশি বহিঃশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলেন তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে জেসমিমা বলছিলেন, দূষণমুক্ত পরিবেশের বিষয়টি সেই শৈশব থেকেই মনে দাগ কেটেছে। দূষণের শহর ঢাকা। বাসা থেকে বের হলে-ই চোখে পড়ে দূষণের মচ্ছব। আর এসব দেখেই মন খারাপ হতো তার। মনে মনে ভাবতেন, সুযোগ পেলে দূষণমুক্ত শহর গড়ে তুলবেন তিনি। তাই তো অধ্যয়নের বিষয় হিসেবেও পরিবেশ বিজ্ঞানকে বেছে নিলেন জেসমিমা। 

স্কুলে নানা ধরনের এক্সর্টা কারিকুলারে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেসমিমা। পরিবেশ নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে পরবর্তীতে যুক্ত হন গ্রিন ক্লাইমেট ইনিশিয়েটিভ-এ। এটি একটি জলবায়ু ও পরিবেশ সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনটির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিয়েটিভ টিমে তিনি কাজ করেন। আবার গ্লোবাল ল’ থিংকার্স সোসাইটিতে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তার কাজের সুনাম রয়েছে। 

জেসমিমা ব্রাইটার্স সোসাইটি নামে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু নির্ভর অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও যুক্ত হন। এখানের ক্যাম্পেইনে অ্যাসোসিয়েট হিসেবে যুক্ত অনেকদিন ধরে। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জলবায়ু নিয়ে সচেতন করে তুলতে মানুষের কাছে ছুটে যান এই তরুণী। এজন্য জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও গিয়েছেন তিনি। সেখানকার সর্বহারা মানুষগুলোর কাছে জলবায়ু ও পরিবেশের নানা বিষয়ের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে সহজেই বুঝিয়ে দেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতির প্রভাব। 

জেসমিমার ভাষ্য, আমরা বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের কাছে ছুটে যাই। যাতে তারা নিজেরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে এবং পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকিস্বরূপ—এমন কর্মকাণ্ড না করেন। পরিবেশ বিষয়ে যাতে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং অন্যদেরও সচেতন করে তোলেন। 

এরই অংশ হিসেবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে দেশি-বিদেশি সংস্থার আয়োজনে ইভেন্টেও সরব উপস্থিতি থাকেন জেসমিমা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু নিয়ে তরুণ-তরুণীদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যত কারো জন্যই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

তার মতে, তরুণরা যদি এগিয়ে না আসে তাহলে অব্যাহত পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সময় থাকতেই আমাদের এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। নয়তো দুর্ভিক্ষের মতো দুর্যোগও দেখা দিতে পারে। 

আগ্রহের আরও নিত্যনতুন বিষয় থাকলেও পরিবেশ দূষণ রোধে নিজেকে যুক্ত করার বিষয়ে তৃণমূলে কাজের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জেসমিমা বলেন, আমি মনে করি পরিবেশ দূষণ রোধে ও জলবায়ু সচেতনতায় নারীরাই সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারেন। উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততা বেশি থাকার ফলে সেখানকার গ্রামগুলোতে আমাদের মা-বোনেরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। এই ঝুঁকি এড়াতেও উদ্যোগী হতে পারেন তারা। 

‘আমি যেহেতু এখনও শিখছি- তাই নিজেকে সব ধরনের শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেই জলবায়ু নিয়ে কাজ করছি। এ মাঝে সমাজের গুণী ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন। তাদেরও পরামর্শ আর দিক-নির্দেশনা আমাকে ভবিষ্যতে কাজ করার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়।’ 

এ ধরনের কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলে থাকেন—পড়াশোনা আর সমাজকল্যাণমূলক কাজ, দুটো একসঙ্গে হয় না। কিন্তু আমার মনে হয় এটা ঠিক নয়।

ইচ্ছে থাকলে সময় করে সব করা যায়। অবশ্য জেসমিমার বেলায় সমাজের কল্যাণ আর পড়াশোনা যেন এক সূত্রে গাঁথা। কারণ অধীত বিষয় আরও কাজের ক্ষেত্রও যে একই। তার পঠিত বিষয় পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনায় তো এসব বিষয়ই নিহীত।  

পরিবারের সার্পোট কেমন পাওয়া যায়? এমন প্রশ্নের বেলায় যেন জেসমিমার হাসি আরও চওড়া হয়ে ওঠে। বললেন, আমি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি এটা দেখে মা-বাবাও উৎসাহ দেন। আজ বাবা থাকলে আরও বেশি খুশি হতেন। তাদের কথা— তোমার কাছ থেকে যদি একজন, দু’জন অথবা ১০ জন উপকৃত হয় এটাই তোমার সার্থকতা। তাই এ কাজে কখনো পরিবার বাধা হয়নি। বোনেরাও আমায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। 

ভবিষ্যতে একটি পরিবেশবান্ধব, সুন্দর ও নিরাপদ এবং সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন জেসমিমা। আর এই সংগ্রামে এগিয়ে যেতে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করছেন।  

‘আমি এমন এক দেশ বা ভূমির স্বপ্ন দেখি যেখানে কার্বন নির্গমন হবে না। সবুজের ঘাটতি থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাবে অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে প্রাণ হারাবে না মানুষ। পৃথিবীর তাপমাত্রা এত বেশি বাড়বে না, যেখানে মানুষের থাকার অনুপযোগী হয়ে যাবে। যেখানে মানুষকে তীব্র শীতে মরতে হবে না আবার প্রচণ্ড গরমেও হাঁসফাঁসও করতে হবে না। শুধু মানুষ-ই নয়, সকল প্রাণী বেঁচে থাকবে তার নিজস্ব নির্মল ও নিরাপদ পরিবেশে। আর নিরাপদে বেড়ে উঠবে, বেঁচে থাকবে সুস্থ শরীর নিয়ে,’ যোগ করেন এই তরুণ পরিবেশবিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিগত তিন নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এনসিপি’র
ভোলায় তোফায়েলের ছেলে বিপ্লব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএমইউতে কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
জলবায়ু সংকট উপকারী প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করছে
গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো দিন : চিফ প্রসিকিউটর
চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে নাবিক নিখোঁজ
ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ২০ জুলাই
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ৫ দিনব্যাপী ভর্তি মেলা শুরু
ঝালকাঠিতে ১০ শহীদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা প্রদান
চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব: অতিরিক্ত চিকিৎসাকর্মী চাইলেন রিইউনিয়নের হাসপাতাল প্রধান
১০