সবার আগে জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে : তারেক রহমান 

বাসস
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ২০:২৮
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান। ছবি: বিএনপি মিডিয়া সেল

ঢাকা, ১ মে, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বাংলাদেশকে কেউ তাবেদারি রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না। 

তিনি বলেন, বিদেশিদের স্বার্থ নয়, দেশের মানুষের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমার, ভারত বা অন্য দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ, এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। বৈষম্যহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণই দেশের মানুষের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, গত দেড় দশক ধরে পতিত স্বৈরাচার পরাধীনতার শেকলে বন্দি করে রেখেছিল। সেই ফ্যাসিবাদের পতন হলেও জনগণের রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ জন্য মানুষ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি পৌঁছে দিতে পারছে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশে জনগণের ভোটে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়। পলাতক স্বৈরাচার দেশে আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায় এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে সংস্কার এবং নির্বাচন উভয় প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান আপনারা সতর্ক থাকবেন। সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এ ধরনের বিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করেছে। তাদের কাছে আমাদের আহ্বান স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই।’ 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে সুস্পষ্ট থাকলে জনমনে সন্দেহ ও সংশয় কেটে যাবে।’  

জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সবাইকে ভালো রাখার জন্যই বিএনপির রাজনীতি এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সরকার প্রতিবারই মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে কাজ করেছে, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে; তাই বিএনপির নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশে এখন সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে, কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি শ্রমিকরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাদের কথা বলতে পারছে না। এ জন্য নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাদের কথা শুনতে বাধ্য।

এর আগে ‘মে দিবস দিচ্ছে ডাক, বৈষম্য নিপাত যাক’- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে নয়া পল্টনে শুরু হয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শ্রমিক সমাবেশ। বেলা ২টায় দিকে এই সমাবেশ শুরু হয়। কর্মসূচি ঘিরে বেলা ১২টা থেকে রাজধানী এবং এর আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সমাবেশ শুরুর আগে জাসাসের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। 

দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের লম্বা সড়কে ফকিরাপুল থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতিতে সমাবেশটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে।

সমাবেশে মাথায় লাল টুপি, গায়ে লাল গেঞ্জি পড়ে আসা শ্রমিকদের কণ্ঠের অন্যতম শ্লোগান ছিল, ‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’। আন্তর্জাতিক শ্রমিকদের এই সার্বজনীন শ্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে দিতে হবে’ এই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো নয়াপল্টন এলাকা। 

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চুয়াডাঙ্গায় মেয়াদোত্তীর্ণ টেস্টিং কিট সংরক্ষণে জরিমানা
খুলনা বিসিডিএস’র ফার্মেসি কাউন্সিলের কোর্স চালুসহ ৬ দফা বাস্তবায়নের দাবি
শেরপুর সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ
ডাকসু নির্বাচনে ৮ কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা, হলে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধ
ঝিনাইদহে সোনালি আঁশের খুশিতে সোনালি হাসি
ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু
মাংস আমদানির কথা ভিত্তিহীন : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
অস্থির বিশ্বে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক 'সবচেয়ে স্থিতিশীল': সি
বিদেশি কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন
১০০টিরও বেশি বোয়িং বিমান কিনবে কোরিয়া
১০