ঝিনাইদহে সোনালি আঁশের খুশিতে সোনালি হাসি

বাসস
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৫:১৫
ঝিনাইদহের সোনালি আঁশ পাট। ছবি: বাসস

\ শাহজাহান নবীন \

ঝিনাইদহ, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : সোনালি আঁশ পাট তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে শুরু করেছে। জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল না হলেও এ বছর জেলায় পাটের ব্যাপক ফলন হয়েছে। বিশেষ করে তোষা জাতের হাইব্রিড পাট চাষ করে এ বছর প্রচুর লাভ হবে বলে আশা করছেন কৃষকেরা। গ্রামে গ্রামে চলছে পাট শুকানোর কাজ। নদী-নালা, খালবিলের পানিতে পাট পঁচানো ও ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের কৃষক। 

জেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় পাটের পচন প্রক্রিয়া (জাগ) ও পাট ধোয়ার পানি সংকট ছিল না। যে কারণে এবার পাটের রং চমৎকার হয়েছে। ফলে কৃষক এবার পাট বিক্রি করে ভালো লাভ করতে পারবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর, শৈলকূপা, হরিণাকুন্ডু, কালীগঞ্জ, মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার দুই ধারে চলছে পাট শুকানোর কাজ। বাঁশের আড় বা আড়া তৈরি করে পাট শুকাতে ব্যস্ত গ্রামের নারী-পুরুষ। রাস্তার পাশের খাল, নালা, বিল, নদ-নদীতে পাট ধোয়ার ধুম পড়েছে। 

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায়  নদ-নদী ও খাল বিলে প্রচুর পানি রয়েছে। পর্যাপ্ত পানি থাকায় পাট জাগ দিতে ও ধুতে কোনো সমস্যা হয়নি। আবার পর্যাপ্ত পানির কারণে পাটের প্রকৃত সোনালি রং ফিরেছে।

শৈলকূপার ফুলহরি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বাসসকে বলেন, গত বছরগুলোতে বৃষ্টির পানি কম ছিল। পাট জাগ (পচন প্রক্রিয়া) দেওয়ার জায়গা পাওয়া যেতো না। পুকুরেও পাট জাগ দিয়েছি। বদ্ধ পানিতে পাট জাগ দিলে পাটের রং ভালো হয় না। এ বছর বৃষ্টি বেশি। খাল-বিল, নদী নালায় অনেক পানি। পাট জাগ দিতে এবার কোনো সমস্যা হয়নি। যে কারণে পাটের রংও এবার ভালো হয়েছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সিংগা গ্রামের পাট চাষি আব্দুল বারেক বলেন, এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বীজের কারণে অনেকের পাট খুব বেশি লম্বা হয়নি। তবে এবার পাটের রং দারুণ হচ্ছে। ভালো করে শুকিয়ে বাজারে নিতে পারলে এবার পাটের ভালো দাম পাওয়া যাবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ২১ হাজার ৪৪৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২শ’ হেক্টর কম জমিতে পাট চাষ হয়েছে। কৃষি অফিসের হিসেবে জেলার ৬টি উপজেলায় ২০ হাজার ২২৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় প্রায় ৫২ হাজার ১১৬ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

সূত্র জানায়, চলতি (২০২৫-২৬) মৌসুমে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ৮১০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৬৬৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৩৫৪ হেক্টর, মহেশপুর উপজেলায় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর, শৈলকূপায় ৭ হাজার ৭৯৮ হেক্টর এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ২ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন কৃষকেরা। জেআরও ৫২৪, বিজেআর আই এবং তোষা পাট-৮ (রবি) জাতের পাট চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলকূপা উপজেলার ভাটই বাজারে পাটের হাটে প্রায় প্রতিদিনই চলছে পাটের বিকিকিনি। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভাটই বাজার, শৈলকূপা উপজেলা বাজার, কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারে গড়ে ৩৫০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকায় প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। তবে পাটের মান ভেদে দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কমবেশি হচ্ছে বলেও জানান ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

পাট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর পাটের মান খুবই ভালো। পাটের প্রকৃত সোনালি রং এবার দেখা যাচ্ছে। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। পাটের গুণগত মান ভালো হওয়ায় আমরাও ভালো দাম দিয়েই কিনছি। পাটের বাজার জমে উঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বাসসকে বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। যে কারণে পাটের পচন প্রক্রিয়ায় কোনো পানির ঘাটতি ছিল না। এ ছাড়া জেলার সকল উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মীরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এ কারণে কৃষক তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়েছে। বাজারে এবার পাটের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যশোরে শুরু হলো জাতীয় কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের রূপসা জোনের খেলা
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে এফসিটিসি’র আর্টিকেল প্রতিপালনের আহ্বান
বেরোবিতে ‘একাডেমিক নিয়ম-রীতি ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ’ বিষয়ক সেমিনার 
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওএমএসের আওতায় ২৪ টাকা দরে আটা বিক্রি হবে
সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় শাড়ি,ওষুধ জব্দ
রাজশাহীতে অপহৃত ব্যক্তি উদ্ধার, আটক ৮
সাবেক যুগ্ম সচিব ও আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল কারাগারে
লিগ্যাল এইড-এ ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৬ জনকে আইনি পরামর্শ সেবা
হিট প্রকল্প মূল্যায়নে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে: ইউজিসি চেয়ারম্যান
চার নতুন মুখ নিয়ে ওমানের দল ঘোষণা
১০