ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : শিশুর পুষ্টি, জীবন ধারণ এবং শারীরিক বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত শিশু খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ মানব দেহ থেকে সন্তানের জন্য শুধুমাত্র একটি খাদ্য আহরণের ব্যবস্থা রেখেছেন, আর সেটি হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। শিশুর সুস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বেঁচে থাকার জন্য তিনটি নির্ধারক আছে। এগুলো হলো- নিরাপত্তা, যত্ন ও রোগ নিয়ন্ত্রণ। এই তিনটির সমন্বয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মায়ের দুধ।
মানব সন্তান পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই প্রতিটি মায়ের বুকে তার অনাগত সন্তানের জন্য খাদ্য প্রস্তুত হতে থাকে। শিশুকে বুকে দিলেই শিশু তার ক্ষুধা, তৃষ্ণা মিটানোর সুধা পেয়ে যায়। প্রথমত তিন/চারদিন শিশু তার মায়ের বুকের দুধ থেকে যে দুধ পায় তা শালদুধ। শালদুধ পরিমাণে কম। কিন্তু জন্মের পরপর শিশুর অপরিপক্ব পাকস্থলির সীমিত ধারণ ক্ষমতার জন্য যথেষ্ট। এই শালদুধ যে শুধু শিশুর ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মিটায় তা নয়, শিশুকে সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে। যে কারণে শালদুধকে বলা হয় জীবনের প্রথম টিকা। মায়ের দুধ পানে শুধুমাত্র শিশুরাই উপকৃত হয় না বরং মায়েরা, তাদের পরিবার এবং সামগ্রিকভাবে সমাজও উপকৃত হয়। মায়ের দুধ শিশুর জীবন ধারণের প্রথম ছয়মাসে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পুষ্টিই সরবরাহ করে না বরং পরবর্তী জীবনে সেই শিশু বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকে।
শিশুর শারীরিক গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মায়ের বুকের দুধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিশুর বেড়ে ওঠার সব উপাদান যেমন- আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পানি ইত্যাদি সুষমভাবে থাকে। শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশুরা পায় সঠিক পুষ্টি, পায় সুস্থ বাড়ন আর মগজের বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপকরণ। শিশুরা পায় শ্রেষ্ঠ সুরক্ষা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। কারণ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, নিউমোনিয়া, কান পাকা, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ থেকে মায়ের দুধ শিশুকে সুরক্ষা করে। বুকের দুধ পান করানোর মাধ্যমে শুধু শিশুই নয় বরং একজন মা নিজেও উপকৃত হতে পারেন।
মায়ের দুধের গুরুত্বকে সবার কাছে তুলে ধরতে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে প্রতি বছর পৃথিবীর ১২০টির বেশি দেশ ১-৭ আগস্ট বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করে। কারণ, এই অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবহেলিত। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এই নবজাতক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ মাতৃদুগ্ধের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সব বাধা উপেক্ষা করে ঘরে ঘরে ফর্মুলা বা কৃত্রিম শিশুখাদ্য পরিহার এবং মাতৃদুগ্ধকে নবজাতক শিশুর একমাত্র খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
শিশুর খাদ্য হিসেবে মায়ের দুধ সোনার মানদণ্ড স্বরূপ। সকল গর্ভবতী মাকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বুকের দুধ দেওয়ার আগ্রহ বাড়াতে হবে। মা ও শিশুর অপুষ্টি, একটি সুস্থ জাতি গঠনের প্রধান অন্তরায়। তাই প্রসব পরবর্তী মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সুনিশ্চিত করতে হবে, যেন তার শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পায়। আমাদের সকলের উচিত সব মাকে এই মর্মে সচেতন করা যে একজন মা একটু ধৈর্য সহকারে চেষ্টা করলেই তার সন্তানকে সফলভাবে বুকের দুধ পান করাতে সক্ষম। পবিত্র কোরআন শরীফে নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায়, তার জন্য জননীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাবেন। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণপোষণ করা’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-২৩৩)।