ঢাকা, ১৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : খুলনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার আলোকে দেশের তরুণ সমাজকে নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এক মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার খুলনা প্রেস ক্লাবে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন।
উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তৌফিক জোয়ার্দার, এ এম জেড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সায়েম মোহাম্মদ, বিডিজবস’র প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর এবং ‘শিখো’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীর চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় উন্নয়নের পথনকশা হিসেবে বিএনপি মহাকাব্যিক ৩১ দফা ঘোষণা করেছে। এই রূপরেখার আওতায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির ৫ শতাংশের কম বরাদ্দ রাখা হবে না।
ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজনীতিকদের। যদি রাজনীতিতে ভালো মানুষ আসেন, তবে জনগণও তাদের অধিকার ভোগ করতে পারবেন।
ফাহিম মাশরুর বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে হলে কলেজ স্তর থেকেই বাধ্যতামূলকভাবে তৃতীয় ভাষা শিক্ষা চালু করা উচিত। বর্তমানে বিভিন্ন এআই টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে খুব সহজেই ভাষা শেখা সম্ভব হচ্ছে, তাই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে এটিকে অবশ্যই জাতীয় কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পায়, তিনি যোগ করেন।
শাহীর চৌধুরী বলে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের ৮৫ মিলিয়নের বেশি তরুণ-তরুণীর কীভাবে শিক্ষা পাচ্ছে তার ওপর। তাই তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বিচ্ছিন্ন কিছু উদ্যোগ নয়, বরং একটি সুসংগঠিত, স্কেলযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো দরকার। প্রথমেই, উচ্চগতির ইন্টারনেটকে সবার জন্য সাশ্রয়ী করতে হবে—এটি এখন ডিজিটাল শিক্ষার অক্সিজেন। পরবর্তী ধাপে স্মার্ট ক্লাসরুম, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং ডেটাভিত্তিক শিক্ষক উন্নয়ন ও যুবদক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চাই না, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে রূপান্তর করতে চাই। এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের সময়।
ডা. তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, মেডিকেল শিক্ষায় ন্যায্যতা ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে কোটা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে স্থানীয় ও গ্রামীণ মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে কম খরচে কিছু বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা গড়ে তুলে মেডিকেল টুরিজম ও এলডারলি কেয়ারগিভার রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
ডা. সায়েম মোহাম্মদ বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বহুলাংশে বিদেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। এর ফলে প্রতিবছর ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও সেবাগ্রহীতা-উভয়ই বিদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন-স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করতে হবে, সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিতরণ করতে হবে এবং একটি রেফারেন্স সিস্টেম চালু করতে হবে। এবং এর জন্য সবার আগে সুস্পষ্ট স্বাস্থ্যনীতি ও স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী করতে হবে, স্বাস্থ্যবীমা কাভারেজ বাড়াতে হবে এবং হেলথ কার্ড চালু করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। স্পেশালাইজড চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতিও অনেকটা রোধ করা যাবে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মাহদি আমিন বলেন, এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীদের যারা সরাসরি বিএনপির সঙ্গে জড়িত নন, কিন্তু নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন তাদের সম্পৃক্ত করা। বিশেষ করে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও একীভূতকরণের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতের জন্য সর্বোত্তম নীতিগুলো তৈরি করতে চাই।
দেশের জন্য সেরা নীতি প্রণয়নে আমরা সেরা মানুষের মতামত শুনতে চাই, যাতে জনগণ বিএনপিকে সরকার গঠনের সুযোগ দিলে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।