অটিস্টিক শিশুদের প্রতি যত্নশীল ও সচেতন থাকতে হবে

বাসস
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৭:০৫
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস): জমিলা আর রায়হান বিয়ে করেন ভালোবেসে। পরিবার প্রথমে মত না দিলেও পরে দুই পরিবারই মেনে নেয় তাদের এই বিয়ে। প্রথম তিন বছর তারা কোন বাচ্চাই নেয়নি। ইচ্ছে ছিল নিজেদের একটু গুছিয়ে তারপর সন্তান নেবে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছরের মাথায় তাদের পরিবারে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। শুরুতে ভালোই কাটছিল জমিলা আর রায়হানের দিন। তাদের সব স্বপ্নই তৈরী হচ্ছিল সন্তান সাইদুরকে নিয়ে। 

কিন্তু জন্মের ছয়-সাত মাস পরেই বুঝতে পারে তাদের সন্তান অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মত নয়। তাদের সাইদুর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। সে অটিস্টিক। ডাক্তারের এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাদের দু’জনের মাথায়। এ কথা জানার পর কয়েকদিন ভালো করে কোন কিছু চিন্তাও করতে পারেননি তারা। পরে আবার তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেন- কীভাবে সাইদুরকে সুস্থ জগতে ফিরিয়ে আনা যায়।

প্রতিটি শিশুই নিষ্পাপ। আর অটিস্টিক শিশুরা তো এমন শিশু যে তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা নিজের চাহিদা, অনুভূতি, আবেগ সুন্দরভাবে কিংবা মন খুলে প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়।

সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন এর পরিসংখ্যান মতে, ঢাকাতে ৩ শতাংশ শিশু অটিস্টিক। তবে বাংলাদেশে এ হার ০.১৫ শতাংশ।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মনির হোসেন বলেন, অটিজম শব্দটা সম্পর্কে আগে আমাদের খুব একটা ধারণা ছিল না। তবে এখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এ রোগ সম্পর্কে জানছে। 

তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুরা নিজেদের চাহিদা নিজেরা প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য বাবা-মা বা আশপাশের আত্মীয়-স্বজন যদি সচেতন থাকে তবে এ ধরনের অনেক বাচ্চাই সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। এমনকি অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা বড় হয়ে চাকরী করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রায় অনেক অটিস্টিক বাচ্চারই কোন না কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে। আর সেসব বাচ্চারা তাদের সেসব বিষয়ে খুব পারদর্শী হয়।

ডা. মনির বলেন, সরকার অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে অটিজম বিভাগ খোলা হয়েছে যাতে করে এ ধরনের শিশুদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। 

একই হাসপাতালের আরেক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, কারো পরিবারে অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম নিলে আগে বাচ্চার মাকেই দোষারোপ করা হত। যেন বাচ্চার মা’ই এ ধরনের বাচ্চা জন্মদানের জন্য দায়ী। কিন্তু আসলে এতে মায়েদের কোন দোষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও এখন এ ধরনের মনোভাব অনেকাংশে কমেছে। মূলত সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে। 

তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন করতে হয়। সবসময় এদের কী চাহিদা বা এরা কি করতে চাইছে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় যথাযথ জ্ঞান ও ধারণার অভাবের কারণে এ ধরণের শিশুদের ঘরের বাইরে খুব একটা নেয়া হয় না। তবে তাদের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বাবা মা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বড় বিভাগীয় শহর যেমন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। তবে কম অটিস্টিক শিশুদের যদি অন্য সাধারণ শিশুদের সাথে তাদের স্কুলে পড়ালেখা করানো যায় তবে অটিস্টিক শিশুরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য স্কুলের শিক্ষক এবং অন্য অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং এগিয়ে আসেন তবে অটিস্টিক শিশুরাও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি
বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ : চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যু
হরিণ শিকার ঠেকাতে সুন্দরবনে চিরুনি অভিযান চলছে
দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সুপারম্যাক্স কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ফ্রান্সের 
কান চলচ্চিত্র উৎসব : প্রথম সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
মিরপুরে শ্যামল পল্লী বস্তিতে আগুন
সাতক্ষীরায় ৩ হাজার বস্তা ভেজাল মৎস্য খাবার জব্দ
মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মী আটক
বন্দর কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়ে আংশিক তথ্য প্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট
১০