বসতবাড়িতে মাছ ও সবজি চাষ অপুষ্টি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে 

বাসস
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৭:৩৪
প্রতীকী ছবি

মৌলভীবাজার, ১৮ মে, ২০২২৫(বাসস): অপুষ্টি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি, তবে সচেতন হলে সহজেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। মাছ ও সবজি থেকে আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ পেতে পারি। সীমিত আয়োজনে বসতবাড়িতে মাছ ও সবজি চাষ করেই এই পুষ্টির যোগান দেয়া সম্ভব। 

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মরিয়ম বেগম (৫১) তার পাঁচ বছরের নাতনিকে স্থানীয় ইপিআই কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। শিশুটিকে দেখে তিন বছরের শিশু মনে হয়। তার শরীরে অপুষ্টির ছাপও সুস্পষ্ট। 

মরিয়ম বলেন, ‘শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার এত গুরুত্বপূর্ণ তা আগে জানতাম না। এখন কয়েক মাস পর পর আমার নাতনিকে ইপিআই কেন্দ্রে নিয়ে এসে তার ওজন দেখে যে খাবারের মেনু করে দেয়া হয় সেইভাবে তাকে খাওয়াই। এতে আগের চেয়ে তার অবস্থা উন্নত হচ্ছে।’ 

বাংলাদেশে মরিয়মের নাতনির মতো অনেক শিশুই অপুষ্টির শিকার। তবে সিলেট বিভাগে এ হার অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নমানের খাদ্য গ্রহণ থেকে হয়ে থাকে। সাধারণত নারী ও শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে বেশি। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যা তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, মেধার উন্নয়ন, রোগব্যাধি ও শিক্ষাগত অর্জনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। এ কারণে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিশুদের পুষ্টির অবস্থা ও  খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে দেশের সবচেয়ে দুর্বল সংবেদনশীল সূচক হিসেবে দেখা হয়। 

‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে ২০১৪’-এ প্রকাশিত এক সার্ভে রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘সিলেট বিভাগে সারা দেশের মধ্যে অপুষ্টির হার সবচেয়ে বেশি। এখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শতকরা ৪৯.৫ ভাগ শিশু খর্বকায়; যা তীব্র অপুষ্টির পরিচয় বহন করে। এখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জনে ৬৭ জন। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উত্তরপূর্ব অঞ্চলে মা ও শিশুদের অপুষ্টি এবং খর্বতার হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় তারা দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টিচক্রে আক্রান্ত।’

এসব কারণে এ বিভাগে মা ও শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে ‘ওয়ার্ল্ড ফিস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তারা আটটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করে বিভিন্ন ধাপে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে। ‘ওয়ার্ল্ড ফিস’-এর জেলা মৎস্য বিশেষজ্ঞ ড. মো. মাহবুবুল আলম মিঞা বলেন, ‘সূচনা প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা বসতবাড়িতে মাছ ও শাক-সবজি উৎপাদনের মাধ্যমে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করছি। মা ও শিশুর পুষ্টির উন্নয়নের মাধ্যমে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের খর্বাকৃতির হার অতিরিক্ত ৬শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা সরকারের সহযোগিতা নিয়ে আটটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে কাজ করছি।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ভূমিহীন, আধা শ্রমিক, স্বল্প আয়ের মানুষ যারা দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পুষ্টিকর খাবার কিনে খেতে পারে না এবং যাদের পুষ্টি বিষয়ে জ্ঞান নেই তাদেরকে মাছ ও সবজি চাষ ছাড়াও পুষ্টিজ্ঞান ও সুস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

শিশুর জন্মের প্রথম ১০০০ দিন শিশুদের সুস্থতা, বিকাশ, বৃদ্ধির অগ্রগতি এবং উন্নতির জন্য পুষ্টিগত অবস্থা একটি পরিমাপক হিসেবে বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে বিবেচিত। এটাকে গুরুত্ব দিয়ে সূচনা প্রকল্প কাজ করছে বলে জানান কনসোর্টিয়ানের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’-এর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ডা. রাইসুল হক। তিনি বলেন, ‘শিশু জন্মের প্রথম ১০০০ দিনকে গুরুত্ব দিতে হলে কয়েক ধাপে শিশুর যত্ন, টিকাদান এবং খাবারের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হয়। এজন্য শিশুর জন্মের দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ, ৬-৯ মাস বয়সী শিশুর জন্য ২৫০ এমএল খাবারের অর্ধেক বাটি দিনে দুই বার, ৯-১১ মাস বয়সীদের দিনে তিন বার এবং ১২-২৩ মাস বয়সীদের পুরো বাটি দিনে ৩-৪ বার দিতে হবে। এ খাবারের মাঝখানে শিশু পুষ্টিকর স্ন্যাকস খেতে পারে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘শুরুতে ওই জনগোষ্ঠীর অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো। এখন অনেক ভালোর দিকে এগুচ্ছে। আমরা সরকারের ইপিআই কেন্দ্র ব্যবহার করে কাজ করছি। প্রয়োজন হলে মা বা শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পাঠাচ্ছি।’

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য অফিস সূত্র মতে, মাছ ও সবজি চাষ মূলত নারীরাই করছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে কারিগরি দিকে অর্থাৎ মাছ চাষের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং তাদের কাজ পর্যবেক্ষণ করে থাকে মৎস্য অফিস কর্মকর্তারা। এটা শুধু পুষ্টি ঘাটতি বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না, তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সহায়তা করছে।

মৎস্য অফিস জানায়,তারা চাষীদের বছরে দুই বার শীত ও গ্রীষ্মে বীজ ও মাছের পোনা বিতরণ করে। তেলাপিয়া, মলা এবং কার্প জাতীয় মাছের পোনা এবং ৭-৮ ধরনের বীজ (লালশাক, কলমি শাক, মিষ্টিকুমড়া, সীম, রাইশাক, ডাটাশাক, কচুরলতি, বরবটি) বিতরণ করা হয়। যাদের জায়গা কম, তারা বর্গা নিয়ে এসব চাষ করছে। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে তারা উদ্বৃত্ত সবজি ও মাছ বিক্রি করছে। 

দেশের অন্যান্য এলাকায় এ ধরনের কাজ মানুষের অপুষ্টি প্রতিরোধ এবং জীবনমান পরিবর্তনে যেমন সহায়তা করবে তেমনি জাতীয় উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও এ কাজের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি
বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ : চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যু
হরিণ শিকার ঠেকাতে সুন্দরবনে চিরুনি অভিযান চলছে
দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সুপারম্যাক্স কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ফ্রান্সের 
কান চলচ্চিত্র উৎসব : প্রথম সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
মিরপুরে শ্যামল পল্লী বস্তিতে আগুন
সাতক্ষীরায় ৩ হাজার বস্তা ভেজাল মৎস্য খাবার জব্দ
মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মী আটক
বন্দর কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়ে আংশিক তথ্য প্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট
১০