\ এস এম জাহিদ হোসেন \
খুলনা, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : সুন্দরবনে হরিণ শিকার ও চোরাচালান ঠেকাতে শুরু হওয়া চিরুনি অভিযান অব্যাহত রেখেছে বন বিভাগ। পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে ১ মে থেকে মাসব্যাপী এই অভিযান শুরু হয়।
গত ১৭ দিনে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ জন হরিণ শিকারিকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক হরিণ ধরার ফাঁদ, হরিণের মাংস, বিষাক্ত চিংড়ি ও নিষিদ্ধ কাঁকড়া ধরার ফাঁদ।
চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৪ কেজি হরিণ ধরার ফাঁদ, ৪২ কেজি হরিণের মাংস, ৭০ কেজি বিষাক্ত চিংড়ি ও এক বোতল কীটনাশক। এছাড়া ১৪২টি নিষিদ্ধ কাঁকড়া ধরার ফাঁদ, চারটি ডিঙি নৌকা ও পাঁচটি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে।
শরণখোলা রেঞ্জ থেকেও ২০ কেজি হরিণ ধরার ফাঁদ ও সুন্দরী কাঠবোঝাই একটি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। সেখান থেকে আরও ছয় চোরাশিকারিকে আটক করা হয়।
এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় শরণখোলা ও দাকোপ থানায় একাধিক বিভাগীয় বন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, শিকারিরা গভীর জঙ্গলে নাইলনের জাল পেতে হরিণ ধরছে। অভিযানের অংশ হিসেবে বন প্রহরীরা পায়ে হেঁটে গহিন বনে টহল দিচ্ছেন।
ডিএফও মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাসসকে বলেন, প্রথম ১৮ দিনে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে। উদ্ধারকৃত ফাঁদ মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। অবৈধ জাল ও ফাঁদ ঘটনাস্থলেই পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। সাম্প্রতিক বছরে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংঘ আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪টি। ২০০৪ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৩ হাজার। অর্থাৎ এক দশকে প্রায় ৫৩হাজার ৬০০’রও বেশি হরিণ বেড়েছে।
বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘শিকারিরা জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালের ছদ্মবেশে হরিণ নিধন করছে।’ চলমান অভিযান ইতিবাচক ফল দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় হরিণের মাংসের দাম কম থাকায়, এর চাহিদা বাড়ছে। ফলে শিকারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।’
তিনি সুন্দরবনের উভয় বিভাগে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এই চক্রকে নির্মূল করার আহ্বানও জানান।