ঢাকা, ২৪ জুন, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন শিল্প কৌশল বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করবে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লন্ডনে এ শিল্প কৌশলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে সারাহ কুক বলেন, যুক্তরাজ্যের আধুনিক শিল্প কৌশল হলো অবকাঠামোকে শক্তিশালী করা, ব্যবসায়ীদের খরচ কমানো এবং নীতিমালাকে সহজ করতে দশ বছরের পরিকল্পনা।
গত ২৩ জুন লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই দশকব্যাপী শিল্প কৌশল ঘোষণা করেন। এর লক্ষ্য হলো- যুক্তরাজ্যকে বৈশ্বিক ব্যবসার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করা, বিনিয়োগ বাড়ানো, উচ্চমানের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্প উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
নতুন এ নীতিমালার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনখাতে সহযোগিতার নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ শিল্প কৌশলের প্রধান প্রধান দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে— ২০২৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ-নির্ভর উৎপাদন খাতে বিদ্যুৎ ব্যয় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো, যাতে যুক্তরাজ্যের বিদ্যুৎমূল্য ইউরোপের অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
এতে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে (এসএমই) সহায়তা দিতে ব্রিটিশ বিজনেস ব্যাংকের সক্ষমতা ২৫.৬ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
শিল্পখাতে চার বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ রাখা হবে, যা ভেঞ্চার ফান্ডের মাধ্যমে আরও বিপুল পরিমাণ বেসরকারি পুঁজিকে উৎসাহিত করবে। প্রশাসনিক ব্যয় ২৫ শতাংশ কমিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর বিধিনিষেধের বোঝা হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) বাৎসরিক ব্যয় ২০২৯-৩০ অর্থবছর নাগাদ ২২.৬ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) দুই বিলিয়ন এবং উন্নতমানের উৎপাদনখাতে ২.৮ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বের সেরা প্রতিভাবান কর্মীদের আকৃষ্ট করতে যুক্তরাজ্য সরকার নতুন ভিসা ও অভিবাসন সংস্কার আনবে, যার অংশ হিসেবে ৫৪ মিলিয়ন পাউন্ডের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট ফান্ড’ এবং একটি ‘ গ্লোবাল ট্যালেন্ট টাস্কফোর্স’ গঠন করা হবে।
শিল্প কৌশলটি আটটি উচ্চ-সম্ভাবনাময় খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেগুলো হলো- উন্নতমানের উৎপাদন, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি শিল্প, সৃজনশীল শিল্প, প্রতিরক্ষা খাত, ডিজিটাল ও প্রযুক্তি, আর্থিক সেবা, জীববিজ্ঞান এবং পেশাগত ও ব্যবসায়িক সেবা ।
প্রতিটি খাতের জন্য দশ বছর মেয়াদি একটি পৃথক রোডম্যাপ থাকবে, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা এবং স্থায়ী ও উচ্চমানের কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এটাকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য একটি ‘মোড় ঘোরানো ঘটনা’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, এই শিল্প কৌশল যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির গতিপথ পাল্টে দেবে এবং অতীতের স্বল্পমেয়াদি সমাধান ও চটজলদি সংস্কারে এক ধরনের ছেদ টানবে।
স্টারমার বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে এটি ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও ভালো কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রয়োজনীয় দীর্ঘমেয়াদী দিকনির্দেশনা ও নিশ্চয়তা দেবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পরিকল্পনা দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে, প্রবৃদ্ধির বাধা দূর করবে এবং যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বার্তা পরিষ্কার—যুক্তরাজ্য আবার ফিরে এসেছে এবং ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।