মো. আয়নাল হক
রাজশাহী, ২৫ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, পরিবেশগত স্থায়িত্ব রক্ষা, দূষণ হ্রাস এবং অঞ্চলটিকে সবুজ ও স্বাস্থ্যকর নগর পরিবেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে নানা প্রচেষ্টা চলছে।
সামাজিক বন বিভাগ (ডিএসএফ) ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে বিএমডিএ ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সেচকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং অযত্নে পড়ে থাকা পুকুর ও খাল পুনঃখনন ও ব্যবস্থাপনার কাজ হাতে নিয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও অঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য উন্নত করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মৌলিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- অব্যবহৃত জলাশয় পুনঃখনন, জলাশয়ের চারপাশে বৃক্ষরোপণ এবং কম পানি-নির্ভরশীল ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান। যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস ও গুরুত্বপূর্ণ পানিসম্পদ সংরক্ষণে সহায়ক হবে।
বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক তরিকুল আলম বলেন, ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি সেচ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে বহু প্রাকৃতিক জলাশয় অব্যবস্থাপনায় পড়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো ভূগর্ভস্থ থেকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি-নির্ভর সেচ ব্যবস্থায় রূপান্তর। পুকুর, খাল ও বড় বড় জলাশয় পুনঃখননের মাধ্যমে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, সেচ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গৃহস্থালির কাজে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি।’
তরিকুল আলম জানান, বিএমডিএ কৃষকদের ইরি-বোরো ধানের পরিবর্তে গম, ভুট্টা, ডাল ও তেল বীজজাতীয় ফসল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে। এতে তুলনামূলকভাবে কম পানি লাগে এবং ভূগর্ভস্থ পানি সংরক্ষণে সহায়ক।
বিএমডিএর বিভিন্ন প্রকল্পে খাল ও পুকুরের পাড়ে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি সংযুক্ত করা হয়েছে। যা পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
অন্যদিকে সামাজিক বন বিভাগ ২০২০ সালের নভেম্বরে ‘রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলার ৩২টি উপজেলায় এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রফিকুজ্জামান শাহ বাসসকে জানান, ৩৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণমূলক সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন।
তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন সহায়তা পেয়েছেন এবং প্রায় ৩ হাজার ৫০০ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবার বনসম্পর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে জীবিকা অর্জন করছে।
প্রকল্পের আওতায় নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানকে পরিবেশবান্ধব উপায়ে উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বসার ব্যবস্থা, সড়ক, পার্কিং এলাকা, হাঁটার পথ, নির্দেশিকা মানচিত্র, টয়লেট ও পানি সরবরাহ সুবিধা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যা তাদের পুষ্টি ও জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।
রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, ‘৬০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে সরু লম্বা বনাঞ্চল, ১০০ হেক্টর আয়তনের বনজ উদ্যান এবং ৫০ হেক্টর দীর্ঘজীবী ও বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষ প্রজাতির বাগান গড়ে তুলছি। পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার দেশীয় ও শোভাবর্ধনকারী গাছ, ৩ লাখ তালগাছ এবং ৫ হাজার বনজ উদ্ভিদ রোপণ করা হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বজ্রপাতজনিত প্রাণহানি কমাতে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এছাড়া প্রায় ১ হাজার ২৫০ ভেষজ গাছের একটি ঔষধি উদ্যান তৈরি হচ্ছে এবং ২০ হেক্টর জমিতে শালবন পুনর্জীবিত করতে সমৃদ্ধকরণ বৃক্ষরোপণ চলছে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে দুটি বৃক্ষ উদ্যান গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষ প্রজাতি এবং ভেষজ উদ্ভিদ থাকবে।
পর্যটন আকর্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সোনাদিঘি ও দিবর দিঘিকে ঘিরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলছে। যার মধ্যে রয়েছে- হাঁটার পথ, বসার বেঞ্চ ও অন্যান্য পর্যটন সুবিধা ।
এছাড়া উপকারভোগী ও স্থানীয় জনগণকে ফলবাগান তৈরি ও ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ও প্রশমন, পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা এবং বন্যপ্রাণী সুরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।