ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ঢাকায় শুরু হওয়া তিন দিনের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জলবায়ু সহনশীল সম্প্রদায় গঠনে এগ্রোফরেস্ট্রি সম্প্রসারণ ও কৃষি-বনায়নের সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৈঠকে সার্কভুক্ত ছয় দেশের প্রায় ৩০ জন গবেষক, নীতি-নির্ধারক ও বাস্তবায়নকারী অংশ নিচ্ছেন। তারা এগ্রোফরেস্ট্রিকে টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কৌশল, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
সার্ক কৃষি কেন্দ্রের সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট ড. রাজা উল্লাহ খান অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগ্রোফরেস্ট্রি কার্যকর একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এখন সময় এসেছে কৃষি ও বনায়নের মধ্যে সঠিক সমন্বয় ঘটানোর। উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশগ্রহণকারীরা বৈঠকের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা আন্তর্জাতিক বন গবেষণা কেন্দ্রের (সিআইএফওআর)- ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ ইন এগ্রোফরেষ্ট্রি (আইসিআরএএফ) এর সিনিয়র ফেলো ড. এস কে ধ্যানি বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খাদ্যের চাহিদা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। উর্বর কৃষিজমি বনায়নের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। কৃষি ব্যবস্থায় গাছ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, জল সংরক্ষণ, কার্বন সঞ্চয় এবং গ্রামীণ জীবিকার উন্নয়ন সম্ভব। এজন্য নীতি-সমন্বয়, গাছের চারা সরবরাহ বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ও গবেষণা বিনিয়োগ জরুরি।’
সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক তানভীর আহমেদ তরফদার বলেন, ‘এগ্রোফরেস্ট্রি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং কার্যকর নীতি অপরিহার্য।’
বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই এগ্রোফরেস্ট্রির সফল উদাহরণ রয়েছে। এখন এটিকে কৃষি নীতির সঙ্গে একীভূত করতে হবে। এটি কেবল জীবিকা নয়, বরং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গঠনের জন্য অপরিহার্য।’ এগ্রোফরেস্ট্রি প্রোমোশন নেটওয়ার্কের ড. রোল্যান্ড ফ্রুটিগ বলেন, ‘এগ্রোফরেস্ট্রি শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়; বরং এটি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গঠনে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।’
প্রথম দিনের প্রযুক্তিগত সেশনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) ড. মো. সাইফুল্লাহ। এতে বিশেষজ্ঞরা সার্ক অঞ্চলে এগ্রোফরেস্ট্রি সম্প্রসারণের কৌশল, বাস্তব অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন দেশের কেস স্টাডি ও সফল প্রকল্পের উদাহরণ উপস্থাপন করেন।
বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে এগ্রোফরেস্ট্রি শুধু খাদ্য উৎপাদন বাড়ায় না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং গ্রামীণ মানুষের আয়ের সুযোগ তৈরির অন্যতম কৌশল।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা চলা এ বৈঠকে আঞ্চলিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি যৌথ গবেষণা, বিনিয়োগ এবং সক্ষমতা উন্নয়নের অঙ্গীকার নেওয়া হবে।