জানুয়ারির মধ্যে ৭ হাজার পথ-কুকুরকে টিকা দেবে খুলনা সিটি করপোরেশন

বাসস
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫১
পথকুকুর। প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

খুলনা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে শহরের ৩১টি ওয়ার্ডে ৭ হাজার পথকুকুরকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। রাস্তায় কুকুরের কামড় ও জলাতঙ্ক রোগ নিয়ে জনসাধারণের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

২০২৩ সালে খুলনা সিটি করপোরেশন একই ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে ৬ হাজার পথকুকুরকে টিকা দেয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুর অনেক পথচারীকে বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলছে। কুকুর গাড়ি তাড়া করার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে।

স্থানীয়রা খুলনা সিটি করপোরেশনের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে এবং অসংখ্য অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। 

অভিযোগকারীদের মধ্যে ভুক্তভোগী, সমাজকর্মী, শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও সাবেক কাউন্সিলরা রয়েছেন।

কেসিসি কর্মকর্তারা জানান, পথকুকুর বিশেষ করে আবর্জনা ফেলার স্থানগুলোতে আকৃষ্ট হয়, সেখানে তারা খাবার খোঁজার জন্য পলিথিন ব্যাগ ছিঁড়ে ফেলে এবং প্রায়ই সেখানে আশ্রয় গড়ে তোলে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার অভ্যাস এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে।

শহরের লবনচরা, মোল্লাপাড়া, জিন্নাপাড়া, মাস্টারপাড়া, মহিরবাড়ী খালপার, মৌলারবাড়ী খালপার, কয়রা বাজার, মিয়াপাড়া, পূর্ব বানিয়া খামারসহ বিভিন্ন এলাকায় পথকুকুরের উৎপাতের ঘটনা প্রচুর।

কেসিসি কর্তৃপক্ষ একটি প্রাথমিক জরিপে বিভিন্ন স্থানে বেওয়ারশি কুকুরের সংখ্যা গণনা করেছে। এর মধ্যে নিরালায় ৪১টি, পিটিআই মোড়ে ৩৬টি, গল্লামারীতে ২৮টি এবং নিউ মার্কেটে ৩০টি কুকুর রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী, যেমন- বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (জিকেডিএসসি), খুলনা নাগরিক সমাজ, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ, এবং স্থানীয় স্কুল কর্তৃপক্ষ কেসিসিকে নিয়মিতভাবে এই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে আসছে।

সম্প্রতি এক জনসভায় প্রাণী অধিকারকর্মী এস.এম. সোহরাব হোসেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান এবং জিকেডিএসসি সভাপতি শেখ আশরাফুজ্জামান কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

কেসিসির এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা এবং প্রস্তাবিত সমাধানের বিষয়টি ২০২৬ সালের ডেপুটি কমিশনার কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাবটি ইতোমধ্যে খুলনা ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কেসিসি শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জনসচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে আজ খুলনা মডেল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে তাদেরকে পোষা প্রাণী পালন এবং পথকুকুর নিয়ে সচেতন করা হয়।

কেসিসি কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বর্তমানে খুলনা শহরে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার পথকুকুর রয়েছে, যা জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং শহরে জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

কেসিসি পরিচালিত একটি গবেষণায় পথকুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

কেসিসির খাদ্য নিরাপত্তা এবং জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস জানান, ২০২৬ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।

তিনি বলেন, আমাদের আরও কর্মী প্রয়োজন, বিশেষত খামার পশু চিকিৎসক, পথকুকুরকে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পথকুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধির একটি প্রধান কারণ। অনেক শহরবাসী বর্জ্য ফেলার সময় ডাস্টবিনগুলো খোলা রাখে এবং রাস্তায় সরাসরি বর্জ্য ফেলে, যা কুকুরদের জন্য খাদ্যের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে জাপানসহ অন্যান্য দেশগুলোর কঠোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি পথকুকুরকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

কিছু স্থানী বাসিন্দা পথকুকুরকে খাওয়ালেও তারা কখনো কুকুরের বন্ধ্যাত্ব, টিকাদান বা আশ্রয়ের দায়িত্ব নেয় না। যার ফলে কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে।

২০১৯ সালের প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী, কেসিসি পথকুকুরকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপসারণ বা নির্মূল করতে পারে না। পর্যাপ্ত কর্মী, তহবিল এবং একটি বিস্তৃত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কেসিসি কর্মকর্তারা জানান, প্রজনন মৌসুমে (আগস্ট থেকে নভেম্বর) এই সমস্যা আরও খারাপ হয়, যদিও প্রজনন সারা বছর ধরে চলে।

আগে এই সমস্যা ইউএসএইড-সমর্থিত আর্ক প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা হতো। কিন্তু মার্কিন নীতির পরিবর্তনের কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে কেসিসি বর্তমানে তাদের নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। 

এটি গবেষণা ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, শহরের পরিবেশ নিরাপত্তা এবং প্রাণী কল্যাণের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা।

কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রাণিকল্যাণ এবং জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে পরবর্তী সাধারণ সভায় বিস্তারিত প্রস্তাব উপস্থাপন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কেসিসি প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার বলেছেন, কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা যত দ্রুত সম্ভব টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় এই কর্মসূচিতে ১৮০ জনেরও বেশি কর্মীকে যুক্ত করবে এবং এটি এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলবে। এর মূল লক্ষ্য হলো জলাতঙ্কের বিস্তার রোধ করা এবং জননিরাপত্তা বাড়ানো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দুর্গাপূজার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে
ফায়ারফাইটার নূরুল হুদার প্রতি সহকর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা
বাংলাদেশকে ১৬৯ রানের টার্গেট দিল ভারত
করাচিতে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ১১৫টি প্রতীক বরাদ্দ করে গেজেট প্রকাশ
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতির মৃত্যুতে উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদের শোক
বিধি সংশোধন করে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ দিতে ইসিতে এনসিপির আবেদন 
ফ্ল্যাট, হোটেল ও ছাত্রাবাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থাকলে তথ্য দেয়ার আহ্বান ডিএমপি’র
বার্সা শিবিরে দু:সংবাদ
বয়সের কারণে ইয়ামাল ব্যালন ডি’অর পাননি
১০