ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন (২৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বংশাল থানা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে— মো. মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৯) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টুরোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বংশাল থানার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং, ‘রৌশান ভিলা’ নামের বাড়িটির সিঁড়িঘরের নিচে গত রোববার বিকেলে সংঘটিত হয় এই হত্যাকাণ্ড।
নজরুল ইসলাম বলেন, নিহত জোবায়েদ হোসেন পুরান ঢাকার ওই বাসায় গিয়ে টিউশনি করতেন। ছাত্রী ছিলেন বার্জিস শাবনাম বর্ষা। পড়ার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্ষার পূর্ব থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল মাহির রহমানের সঙ্গে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার প্রায় এক মাস আগে মাহির জানতে পারে বর্ষা এখন জোবায়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। বিষয়টি জানার পর থেকেই মাহিরের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মাহির ও বর্ষার মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সময়েই বর্ষা মাহিরকে জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য উসকে দেয় ও কীভাবে হত্যা করা হবে তার পরিকল্পনা করে।
মাহির তার বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকে পরিকল্পনার কথা জানায়। দু’জন মিলে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের আগানগর বউবাজার এলাকা থেকে ৫০০ টাকায় একটি সুইচ-গিয়ার চাকু কিনে আনে হত্যার উদ্দেশ্যে। গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জোবায়েদ রৌশান ভিলায় পড়াতে আসেন। আগেই মাহির ও আয়লান নিচতলায় সিঁড়ির পাশে ওত পেতে ছিল।
জোবায়েদ আসার সঙ্গে-সঙ্গে মাহির তার কাছে বর্ষার সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মাহির ব্যাগ থেকে চাকু বের করে জোবায়েদের গলার ডান পাশে আঘাত করে। তৎক্ষণাৎ জোবায়েদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
হত্যার সময় বর্ষা ভবনের তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় সিঁড়ি ভেঙে উপড়ে উঠে তখন বর্ষাকে দেখে জোবায়েদ বলে, আমাকে বাঁচাও। কিন্তু বর্ষার কাছে জোবায়েদ বাঁচার আকুতি করলেও সাহায্য পায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঘটনার পর বংশাল থানার পুলিশ একাধিক স্থানে অভিযান চালায়। রোববার রাত সাড়ে ১০টায় নিজ বাসা থেকে বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ভাংনা এলাকা থেকে মাহির রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। একই রাতে ১০টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলীবাগ এলাকা থেকে ফারদীন আহম্মেদ আয়লানকেও গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, তিনজনের বিরুদ্ধেই হত্যার প্রাথমিক স্বীকারোক্তিমূলক তথ্য পাওয়া গেছে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া চলছে।
জোবায়েদ ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা। বন্ধু-বান্ধবের কাছে শান্ত-স্বভাবের, দায়িত্বশীল ও পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। জোবায়েদ কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বংশাল থানার ওসি বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যা। আমরা মূল তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।