ঢাকা, ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : আয়োডিন অভাবজনিত সমস্যা একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যা নিরসণকল্পে ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২১ অক্টোবর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশ্ব আয়োডিন দিবস উদযাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে বিসিক ভবনে ‘বিশ্ব আয়োডিন দিবস-২০২৫’ উদযাপন ও একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
বিসিক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. নাজমুল হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গেইন বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল (এনআই) ও গেইনের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, লবণ মিল মালিক, সাধারণ ভোক্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আয়োডিন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। দেশে অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। এই সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের সকলকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে, সচেতনতাই পারে আয়োডিন জনিত সকল রোগ নির্মূল করতে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আশেক মাহফুজ বলেন, প্রথম দেশ হিসেবে কানাডা লবণ ফর্টিফিকেশন শুরু করে। আমরা অনেক পরে লবণে আয়োডিন যুক্ত করি। আমাদের দেশে লবণে পটাশিয়াম আয়োডেট দেই। তাই তা টেকসই। খোলা রাখলে বা চুলার পাশে রাখলে নষ্ট হয়ে যায় না।
তিনি বলেন, আয়োডিন শরীরে স্টোর হয় না। তাই প্রতিদিন আয়োডিন প্রয়োজন। প্রধান সমস্যা হিসেবে গলগন্ড রোগের কথা বলা হলেও আয়োডিন সঠিকভাবে না পেলে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি হবে না।
বিসিক জানায়, আয়োডিন অত্যাবশ্যকীয় অনুপুষ্টি। আয়োডিন মানুষের স্বাভাবিক, মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। অনুপুষ্টির অভাবজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা অন্যতম। আয়োডিনের অভাবে গলগণ্ড, বামনত্ব, অকাল গর্ভপাত, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিত্বসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
৯০ দশক থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) আয়োডিন ঘাটতিজনিত সমস্যা নিরসনকল্পে আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ লক্ষ্যে লবণ মিলের নিবন্ধন প্রদান, মিলসমূহকে পটাশিয়াম আয়োডেট সরবরাহ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান, লবণমিল ও বাজার পর্যায়ে মনিটরিং এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়।
এ কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে ৭৬ শতাংশ পরিবার আয়োডিনযুক্ত প্যাকেট লবণ ব্যবহার করছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দৃশ্যমান গলগণ্ড এবং বামনত্ব দেশ থেকে সমূলে নির্মূল হয়েছে।
দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করলে সে দেশ আন্তর্জাতিকভাবে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সে স্বীকৃতি পেতে আমাদের আর বেশি দেরি নেই। আর মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই আমরাও সে স্বীকৃতি অর্জন করব।