
\ বিপুল ইসলাম \
লালমনিরহাট, ৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বহু যুগ ধরে কবুতর শান্তি, ভালোবাসা ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও মানুষ শখ, রেসিং প্রতিযোগিতা ও আয়ের উদ্দেশ্যে কবুতর পালন করত। প্রোটিনসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু মাংসের কারণে এটি স্থানীয়দের খাদ্যতালিকায় বিশেষ গুরুত্ব পেত। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রার পরিবর্তন, স্থান সংকট ও কম আগ্রহের কারণে ধীরে ধীরে এই শখের প্রাণীটি হারিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, দেশে প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। লালমনিরহাটে দেশি কবুতর, সিলভার কিং, হোয়াইট কিং, গিরিবাজ, রেসার, ফ্যানটেল ও টিপলার জাতের কবুতর দেখা যেত। এক দশক আগেও গ্রাম, পাড়া-মহল্লা ও রাস্তাঘাটে অসংখ্য কবুতরের উপস্থিতি চোখে পড়ত।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কবুতরের সংখ্যা হ্রাসের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এখনও কবুতর পালনে যথাযথ সহায়তা প্রদান করেনি। আধুনিক ভবন ও স্থাপনার কারণে কবুতরের বাসা বাঁধার স্থান কমে গেছে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, ফাঁদে আটকা পড়া, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে।
বড়বাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াসিন আলী মোল্লা বাসসকে বলেন, আগে মোটামুটি প্রতিটি বাড়িতেই কবুতর দেখা যেত। এখন আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, স্থান সংকট ও নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহে হারিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের কবুতর পালনের ঐতিহ্য।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের নুরুজ্জামান মাস্টার বলেন, এক সময় কবুতরকে ঐতিহ্য ও শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চাঁদ মিয়া জানান, এক সময় সকাল-বিকেলে কবুতরের ওড়াউড়ি ছিল মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এখন আর সেই প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায় না।
খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, আগে বাজারে প্রচুর কবুতর বিক্রি হতো, কিন্তু এখন সেই চিত্র আর নেই।
অন্যদিকে, দুর্গাপুর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা পেলে কবুতর পালন আবারও সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হতে পারে। এতে খরচ কম, লাভ বেশি, আর ডিম ও বাচ্চা বিক্রির মাধ্যমে ভালো আয় করা যায়। সরকার ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা পেলে এ খাত পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাসসকে বলেন, আগে শখ ও আয়ের জন্য অনেকেই কবুতর পালন করত, কিন্তু এখন ব্যস্ত জীবন ও আগ্রহ কমে যাওয়ায় এই ঐতিহ্য কমে গেছে। বর্তমানে যারা কবুতর পালন করছেন, তাদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় আবারও এই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে, যাতে কবুতরের সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের পরিচর্যা নিশ্চিত করতে সহায়তা দেয়া যায়।
স্থানীয়দের মতে, যথাযথ পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা কার্যক্রম নিলে কবুতর পালনের ঐতিহ্য শুধু পুনরুজ্জীবিতই নয়, বরং এটি গ্রামীণ অর্থনীতির এক সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।