বাসস
  ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২১

পেনাল্টিতে ম্যান সিটিকে পরাজিত করে কমিউনিটি শিল্ডের শিরোপা জয় করলো আর্সেনাল

লন্ডন, ৭ আগস্ট ২০২৩ (বাসস/এএফপি) : ম্যানচেস্টার সিটির শিরোপা জয়ের আধিপত্যকে খর্ব করে মৌসুম শুরুর প্রস্তুতি হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী কমিউনিটি শিল্ডের শিরোপা জয় করেছে আর্সেনাল। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র থাকার পর পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৪-১ গোলে ট্রেবল জয়ী সিটিকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জয় করার কৃতিত্ব দেখায় গানার্সরা। 
স্টপেজ টাইমের ১১ মিনিটে লিনড্রো ট্রোসার্ডের ডিফ্লেকটেড শটে ম্যাচে সমতায় ফিরে মিকেল আর্তেতার দল। এর আগে ৭৭ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনার এসিস্টে কোল পালমার দুর্দান্ত কার্লিং শটে সিটিকে এগিয়ে দিয়েছিল। 
টাই ব্রেকারে সিটির প্রথম স্পট কিক থেকে ডি ব্রুইনার শট বারে লাগে। দ্বিতীয় শটে বার্নার্ডো সিলভা সিটির হয়ে গোল করলেও রড্রির শট আর্সেনাল গোলরক্ষক এ্যারন রামসডেল রুখে দেন। আর্সেনালের হয়ে চারটি শটেই সফল ছিলেন মার্টিন ওডেগার্ড, ট্রোসার্ড, বুকায়ো সাকা ও ফ্যাবিও ভিয়েরা। 
সাধারণত এই ধরনের হাই ভোল্টেজ প্রীতি ম্যাচে যা দেখা যার তার থেকে আর্সেনালের চাওয়া উৎসবটা অনেক বেশী উন্মত্ত ছিল। ২০০৪ সালের পর প্রথমবারের মত লিগ শিরোপা জয়ের আনন্দ থেকে আর্সেনাল এই সিটির কাছেই বঞ্চিত হয়েছিল। তারই একটা প্রতিশোধ হিসেবে অনেকেই দেখছে কালকের শিরোপাটি। যদিও লিগের সাথে এই ট্রফির কোন তুলনাই হয়না। 
ম্যাচ শেষে গানার্স বস আর্তেতা বলেছেন, ‘এটা সত্যিই দারুন এক অনুভূতি। বিশে^র সেরা একটি দলের বিরুদ্ধে ওয়েম্বলিতে শিরোপা জয়ের আনন্দের চেয়ে  বড় কিছু আর হতে পারেনা। আমরা এখানে ক্লাবের হয়ে শিরোপা জিততে এসেছি। সমর্থকরাও দারুন খুশী হয়েছে।’
সিটি বস পেপ গার্দিওলা বলেছেন, ‘আমরা সত্যিই হতাশ। আজকে আমরা সবাই জিততে চেয়েছিলাম। ম্যানচেস্টার সিটি একটি ভাল দল। কিন্তু কখনো কখনো তাদেরও হারতে হয়। দিনের শেষে আমরা ভাল কিছু নিয়ে মাঠ থেকে বের হতে পারিনি। তাদের পেনাল্টি শ্যুটাররা আমাদের তুলনায়  ভাল ছিল।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় ইংলিশ দল হিসেবে এক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও এফএ কাপে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে গত আসরে ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখায় সিটি। অথচ এপ্রিল পর্যন্ত আট পয়েন্টের সুস্পষ্ট ব্যবধানে প্রিমিয়ার লিগ টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছিল আর্সেনাল। ছয় মৌসুমে সিটি পঞ্চম লিগ শিরোপা জয় করে, অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে আর্সেনালের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। 
১৬০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে ডিক্লান রাইস, কেই হাভার্টজ ও জুরিয়েন টিম্বারকে দলে ভিড়িয়ে একটি বিষয় আর্সেনাল প্রমান করেছে কোন দলকেই আর তারা ছাড় দিতে নারাজ। লিগ প্রস্তুতিটাও এই শিরোপার মাধ্যমে ভালই সেড়ে নিয়েছে আর্তেতা বাহিনী। বাড়তি অনুপ্রেরনা নিয়ে তারা এবার শিরোপার চ্যালেঞ্জে মাঠে নামবে। কমিউনিটি শিল্ড বিজয়ী একমাত্র দল হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০১১ সালে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল। সেই রেকর্ডকে আরো একবার চাঙ্গা করতে চায় আর্সেনাল। ম্যাচ শেষে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের সাথে শিরোপা আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে সেই বার্তাই হয়তো তাদের দিয়ে দিয়েছে গানার্সরা। গত মৌসুমে ২৪৮ দিন পর্যন্ত লিগ টেবিলের শীর্ষে ছিল আর্সেনাল। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। 
ওয়েস্ট হ্যাম থেকে ১০৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে দলে আসা ইংলিশ মিডফিল্ডার রাইসকে নিয়ে আর্তেতা আত্মবিশ^াসী হতেই পারেন। দারুন পারফরমেন্সের মাধ্যমে রাইস তার কোচকে প্রথম ম্যাচেই সন্তুষ্ট করেছে। আরেক নতুন রিক্রুট লেফট-ব্যাক টিম্বারও নিজ পজিশনে দৃঢ় ছিলেন। অন্যদিকে হাভার্টজও নিজের স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। যদিও শুরুতেই দুটি ভাল সুযোগ নষ্ট করে আর্সেনালকে এগিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন হাভার্টজ। হাঁটুর ইনজুরির কারনে দলের বাইরে থাকা গাব্রিয়েল জেসুসের অনুপস্থিতিতে হাভার্টজের উপরই আক্রমনভাগের দায়িত্ব ছিল। ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগতে থাকা এই জার্মানের সামনে এখন আর্সেনালের জার্সি গায়ে নিজেকে প্রমানের অপেক্ষা। 
এদিকে সিটির হয়ে অভিষিক্ত মাতেও কোভাচিচ প্রথম ম্যাচেই ছিলেন দারুন সরব। চেলসি থেকে এবারের মৌসুমে সিটিতে নাম লিখিয়েছেন কোভাচিচ। যদিও সতীর্থ ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার জোসকো গাভারডিওল আরবি লিপজিগ থেকে শনিবার সিটিতে আসার পর কাল দলে ছিলেন না। 
দ্বিতীয়ার্ধে আর্লিং হালান্ডের স্থাে মাঠে নামা তরুণ পালমারের ৭৭ মিনিটের গোলে এগিয়ে যায় সিটিজেনরা। কিয়েরান টিয়ারনি অসাবধানতা বশত: বলের পজিশন হারালে ডি ব্রুইনার হেড থেকে পালমার কোনাকুনি শটে সিটিকে এগিয়ে দেন। সময় নষ্ট করার নতুন আইনে ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর স্টপেজ টাইমের সময়টা ছিল বেশ দীর্ঘ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১১ মিনিটে সমতায় ফিরে আর্সেনাল। ডানদিক থেকে কাট করে সরাসরি পোস্টে শট নেন ট্রোসার্ড। ডিফেন্ডার ম্যানুয়েল আকাঞ্জির গায়ে লেগে  শটটি ডিফ্লেক্ট হলে সিটি গোলরক্ষক স্টিফন ওরটেগা বল ধরতে পারেননি। নাটকীয় এই সমতায় ফিরেই কার্যত আর্সেনাল তাদের শিরোপা জয়ের আনন্দ অর্ধেকটা সেরে নিয়েছিল। এরপর বাকি কাজটা হয়েছে পেনাল্টিতে।