ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫ (বাসস) : আগামী ২৬ মে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মত আগামী বছরের বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে শিরোপা উপহার দেয়াই আনচেলত্তির সামনে মূল লক্ষ্য।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে ব্রাজিল ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হবার পর আগের কোচ ডোরিভাল জুনিয়র মার্চে চাকরি হারিয়েছেন।
রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাফল্য পাবার আশায় আনচেলত্তির উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে চাচ্ছে ব্রাজিল। বার্তা সংস্থা এএফপি আনচেলত্তির সফলতার পিছনে তিনটি কারণ বের করার চেষ্টা করেছে :
শান্ত চরিত্র :
‘‘কোয়াইট লিডারশিপ’’ অর্থাৎ ‘শান্ত নেতৃত্ব’ নামে আনচেলত্তি একটি বই লিখেছেন। শান্ত ও উষ্ণ চরিত্রের জন্য ইতোমধ্যেই কোচ হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করা আনচেলত্তি নিজেকে ফুটবলের সবচেয়ে চাপের চাকরিতে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ইউরোপের অন্যতম বড় কিছু ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজির মত দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন জাতীয় দলের জন্যও তিনি যোগ্য।
বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে টপকে ২০২৬ বিশ্বকাপে নিজেদের সাফল্য প্রমান করাই এখন ব্রাজিলের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। যে কারনে আসন্ন এই বিশ্বকাপ অন্য সব সময়ের তুলনায় ব্রাজিলকে দারুন চাপে ফেলেছে।
ব্রাজিলের প্রথম বিদেশী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে সেলেসাওদের ডাগ আউটে থাকবেন ইতালিয়ান আনচেলত্তি।
তবে যদি কেউ ভক্ত এবং জাতীয় গণমাধ্যমের তীব্র নজরদারিতে থাকা সত্ত্বেও সাফল্য লাভের জন্য যোগ্য হন, তবে তিনি হলেন অদম্য, সাহসী আনচেলত্তি।
২০২৩ সালে ব্রাজিলের সাবেক অধিনায়ক জিকো বলেছিলেন, ‘আনচেলত্তিই এই পদের জন্য আদর্শ। কারন সবাই, এমনকি প্রতিপক্ষসহ সকলে তাকে শ্রদ্ধা করে। সে ফুটবল সম্পর্কে জানে। একইসাথে এটাও জানেন যে কৌশলের তুলনায় খেলোয়াড়রা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।’
আনচেলত্তিকে একজন দুর্দান্ত ম্যান-ম্যানেজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা তাকে প্রতিভায় সমৃদ্ধ জাতীয় দল থেকে সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করবে।
শক্তিশালী সম্পর্ক :
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের বয়স হবে ৩৪। পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টারের আসন্ন বিশ্বকাপে না খেলার সম্ভাবনাই বেশী। সৌদি ক্লাব আল হিলাল থেকে বছরের শুরুতে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে যোগ দেবার পর ইনজুরির কারনে মাত্র ৯টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবতই তিনি ইনজুরির সাথে লড়াই করছেন।
নেইমারের অনুপস্থিতিতে সেই স্থানটি পূরণ করেছেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। রিয়াল মাদ্রিদে আনচেলত্তির অধীনে ভিনিসিয়াস নিজেকে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে ধারাবাহিকতার অভাবে নিজেকে গুছিয়ে উঠতে পারছিলেন না ভিনি। আনচেলত্তির ছাঁয়ায় এখন রিয়ালের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন।
এছাড়া মাদ্রিদের আরেক তারকা রডরিগোও আনচেলত্তির কোচিংয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এক্ষেত্রে রক্ষনভাগে এডার মিলিটাওর নামও করা যায়।
ইতোমধ্যেই ব্রাজিলের হয়ে তিন গোল করা টিনএজ ফরোয়ার্ড এনড্রিক এবারের মৌসুমে মাদ্রিদের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৩৫টি ম্যাচ। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় করেছেন ৯টি গোল।
পুরনো এই সম্পর্কগুলোর সুবিধা ব্রাজিল জাতীয় দলে ভালভাবেই কাজে লাগাবেন আনচেলত্তি।
ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ :
একমাত্র কোচ হিসেবে আনচেলত্তি ইউরোপের পাঁচটি বড় লিগে শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছেন। এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন চ্যালেঞ্জ খোঁজার চেষ্টা করছেন।
বিশ্বকাপ শিরোপা জিততে পারলেও আনচেলত্তির বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ার পরিপূর্ণতা পাবে।
খেলোয়াড় হিসেবে এসি মিলানের হয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন আনচেলত্তি। এই দলের কোচ হিসেবে জিতেছেন দুইবার। এছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে ইউরোপের শ্রেষ্টত্ব লাভ করেছেন তিনবার। পাঁচটি শিরোপা তাকে অন্য সবার থেকে এগিয়ে রেখেছে।
২০১৯ সালে এভারটনের দায়িত্ব নেবার পর ৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তির ক্যারিয়ারে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিন্তু ২০২১ সালে মাদ্রিদ যখন তাকে আবারো পুন:নিয়োগ দেয় তখন আবারো স্বমহিমায় ফিরে আসেন আনচেলত্তি।
নিজের ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটটা সমৃদ্ধ করতে ব্রাজিলের হয়ে সাফল্য অর্জন এখন আনচেলত্তির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।