রাতুলের স্বপ্ন বিশ্ব দরবারে ক্রিকেটকে তুলে ধরা

বাসস
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩২ আপডেট: : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৪
ছবি : বাসস

চাঁদপুর, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি থেকে উঠে আসা রাতুল দাসের স্বপ্ন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তুলে ধরা। সেই স্বপ্ন লালন করে এগিয়ে যাচ্ছেন রাতুল। পরিশ্রম আর সততা দিয়ে ক্রিকেটকে মনেপ্রাণে ধারন করতে চান। 

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল রাতুলের। বাবার সাথে টিভিতে খেলা দেখতেন। ওই সময় থেকে ব্যাট আর বলের সাথে পরিচয়। ড্রয়িং রুমে তার খেলার চর্চা শুরু হয়।

সেখানে বল আর ব্যাট চালানোর চেষ্টা করতেন। ২০১৬ সালে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা সুজন কুমার দাস চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই থেকে আর থেমে নেই রাতুল। তার স্বপ্ন জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলা এবং বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে আরো বড় করে তুলে ধরা। পৃষ্ঠপোষকতা আর সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটবে এই উদীয়মান ক্রিকেটারের।

রাতুল দাসের (১৭) পিতা সুজন কুমার দাস মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করেন। মা রাখি মল্লিক গৃহিনী। বাবা-মার একমাত্র সন্তান রাতুল।

চাঁদপুরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৫ সালে এসএসসি পাস করেছেন রাতুল।
বাবা মায়ের সাথে রাতুল থাকেন শহরের মিশন রোড মিশন পাড়া ‘চন্দ্রিমা’ নামের বাড়িতে। সেখান থেকেই নিয়মিত ক্রিকেট চর্চা করতে যান শহরের আউটার স্টেডিয়ামেে ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে।

ক্রিকেট ছাড়াও রাতুল সাঁতার, সাইক্লিং, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস খেলায় পারদর্শী। তবে এসব খেলায় স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেও তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে হচ্ছে ক্রিকেট। এখন তার পুরো সময়ই কাটে ক্রিকেট নিয়ে।

শুরু থেকেই রাতুল দাস উইকেটরক্ষক/ব্যাটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। ব্যাটিংয়ে বেশির ভাগ সময় ওপেনার হিসেবে খেললেও মাঝে মধ্যে মিডল অর্ডারেও খেলে থাকেন। চাঁদপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে প্রথমে খেলেছেন অনুর্ধ্ব-১২ দলে। সেখানে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। এরপর সুযোগ হয় অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা দলে। 

এই দলের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এরপর অনূর্ধ্ব-১৬ জেলা দলের হয়ে জেলা ও 
বিভাগ পর্যায়ে খেলেছেন। এই দলে প্রায় ৩৫জন খেলোয়াড় নিয়মিত অনুশীলণ করতো। বর্তমানে রাতুল খেলছেন অনূর্ধ্ব-১৮ দলে। বিসিবির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ প্রতিযোগিতায় জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তার দল।

স্কুল পর্যায়ে জেলা দলের হয়ে খেলেছে রাতুল। এই খেলায় জেলা ও বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল এবং জাতীয় পর্যায়ে হয়েছে রানার্স আপ। রাতুল জেলা ও বিভাগীয় দলের হয়ে তিন ম্যাচে ১৪০-১৫০ রান করে অপরাজিত থেকেছেন বেশিরভাগ সময়। এর মধ্যে স্কুল ক্রিকেটের সময়  ১০৯ ও ৯৫ রান ছিল তার সর্বোচ্চ স্কোর। স্কুল ক্রিকেটে তার গড় রান ৫০ এর অধিক। 

রাতুল চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিকেএসপি, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও ঢাকার সাভারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। চলতি বছর ঢাকা তৃতীয় বিভাগ লিগে খেলছেন।

রাতুল ছোটবেলার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহের বিষয়ে বলেন, টিভিতে দেখে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। বাবা আমাকে প্রথমে ক্লেমন একাডেমিতে দিয়ে আসতেন। সেখানে আমি প্রশিক্ষণ নিতাম। অনূর্ধ্ব-১২ থেকে ১৮ পর্যন্ত আমি আমার একাডেমিতে খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছি। যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তারাও খুবই আন্তরিক। বিশেষ করে আমাদের কোচ শামীম হোসাইন ফারুকী স্যার। আমাদের প্রশিক্ষণের পর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টি বেশ কঠিন ছিল। টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পেলে কিভাবে আমাদের মেধার বিকাশ হবে। এক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় যারা দায়িত্বে আছেন তাদের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং আমাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

রাতুল আরো বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি আমার একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে ক্রিকেট। আমি ক্রিকেট নিয়ে দিনের সিংহভাগ ব্যয় করি। আমার ইচ্ছে জাতীয় দলের হয়ে খেলা এবং বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। 

এক্ষেত্রে আমার ভালো প্রশিক্ষণের সুযোগ দরকার। সুযোগ পেলে আমার সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।

রাতুল তার বয়সী তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, অবসর সময় মোবাইলে কিংবা অন্য কাজে সময় ব্যয় না করে ক্রিকেটসহ অন্য খেলায় যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলে জীবনে শৃঙ্খলা আসবে। একই সাথে মেধার বিকাশ ঘটবে।

রাতুলের বাবা সুজন কুমার দাস বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমার ছেলের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তার আগ্রহ দেখে আমি অন্য কোন খেলায় তাকে সুযোগ করে দেইনি। আমি নিজে সকালে কাজে বের হওয়ার সময় তাকে ক্রিকেট একাডেমিতে দিয়ে আসতাম। আবার দুপুরে বাসায় নিয়ে আসতাম। কারণ রাতুল তখন খুবই ছোট ছিলো। সে ৮ বছর বয়সে বাসায় টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখে হাত-পা নাড়া চড়া করতো। এতেই আমি বুঝেছি তার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ। টিভিতে খেলা দেখার জন্য বাবা-ছেলের খুবই আগ্রহ ছিলো। এখনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকি। 

তিনি বলেন, আমার ছেলের খেলার অভিজ্ঞতার বিষয়ে তার কোচসহ অন্যান্য খেলোয়াড়রা খুবই প্রশংসা করেছেন। এখন তার বিভিন্ন পর্যায়ে সুযোগ দরকার। আমি চেষ্টা করছি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামের অনেক দাম। সেগুলো কেনাও আমার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। রাতুল জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে খেলেছে। তার সাথে আমি সব সময় সঙ্গ দিয়েছি।

চাঁদপুরে এখন ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ ও টুর্নামেন্টের আয়োজন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে ও প্রশাসন উদ্যোগ নিলে অনেক উদীয়মান ক্রিকেটার বেরিয়ে আসবে। আমি আমার সন্তানকে জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে দেখতে চাই। এজন্য সঠিক সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ঠদের প্রতি এ বিষয়ে আহবান জানাচ্ছি। যারা দেশের ক্রিকেট নিয়ে ভাবেন তাদের প্রতি আমার আবেদন জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট উন্নয়নে আপনারা এগিয়ে আসেন।

চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির সহকারী  প্রশিক্ষক পলাশ কুমার সোম বলেন, রাতুল দাস আমাদের জেলার একজন উদীয়মান খেলোয়াড়, সে উইকেট রক্ষক/ব্যাটার। সে একজন হার্ডহিটার ও মারকুটে ব্যাটার। রাতুল দীর্ঘ সময় উইকেটে টিকতে পারে তার ব্যাটিং স্টাইল খুব চমৎকার। তাকে আরো ভালো প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলে সে ভালো খেলে জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। 

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী ক্রিকেট কোচ এবং ক্লেমন চাঁদপুর ক্রিকেট একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক সৈয়দ শামীম আখতার ফারুকী বলেন, রাতুল দাস আমাদের জেলার একজন প্রতিভাবান উইকেট রক্ষক ও ব্যাটার। তার গড় রানরেটও খুব ভালো। সে আরো ভালো প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধা পেলে বয়সভিত্তিক দলসহ জাতীয় দলেও জায়গা করে নিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সে জাতীয় দলের খেলোয়াড় শামীম পাটওয়ারীর মতো একজন মারকুটে ব্যাটসম্যান। রাতুলের ব্যাটিং স্টাইল খুব ভালো, সে অনুশীলনে খুবই মনোযোগী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
চট্টগ্রামে কম্বলের গোডাউনে আগুন, ৩ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
হবিগঞ্জে দুদকের ১৯২তম গণশুনানি অনুষ্ঠিত
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ১,৬৬৫ মামলা
কুমিল্লায় বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ 
ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে ফিলিস্তিনের কূটনীতিকের সৌজন্য সাক্ষাৎ
শুল্কের সাবেক মহাপরিচালক বেলালের আয়কর নথি জব্দ
‘ভূমি’ অ্যাপ উদ্বোধন করলেন ভূমি উপদেষ্টা
দিনাজপুরে গবাদিপশু ও গৃহনির্মাণ উপকরণ বিতরণ 
নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাজ: সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা 
গুজব ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে : তথ্য উপদেষ্টা
১০