
ঢাকা, ২৫ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : নারী কাবাডি বিশ্বকাপ জিতেছেন। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন। দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জনের পূর্ণতায় ভেসে এরপর সাঞ্জু দেবী বলছিলেন, ‘এই ম্যাচটার জন্য ১৩ বছর অপেক্ষা করেছি।’ ঠিক তাই, নারী কাবাডি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর মাঠে গড়াতে ১৩ বছরই অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঢাকায় শেষ হয়েছে সেই অপেক্ষা। ভারত যখন দুইবার তারিখ দিয়েও টুর্নামেন্টটা আয়োজন করতে পারেনি, বাংলাদেশ তখন সেই চ্যালেঞ্জটা নেয় এবং প্রথমবারেই দারুণ সফল এক আয়োজনে মন জয় করেছে সবার।
চ্যালেঞ্জ ছিল অনেক। একে তো প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ আয়োজন। পুরুষ কিংবা নারী কোন বিভাগেই এর আগে এত বড় আসরের স্বাগতিক হয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন সেই সাহসটা শুধু দেখায়ইনি, সুপরিকল্পিত এক আয়োজনে উদাহরণ তৈরী করে দিয়েছে।
সোমবার ফাইনালের প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মাহবুব-উল-আলমও বলেছেন, এ ধরণের বড় মাপের আয়োজনে ভেন্যু ব্যবস্থাপনা, এ্যাথলেটদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত থেকে শুরু করে নিরাপত্তার মত বিষয়গুলোতে যেখানে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই- সে সব কিছুই কাবাডি ফেডারেশন সুচারুভাবে সম্পন্ন করে একটা বার্তা দিয়েছে যে, বাংলাদেশ ভবিষ্যতেও এ ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারবে।
কাবাডি ফেডারেশন সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছে একেবারে শুরু থেকে। বড় অঙ্কের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি ১০ টি দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি একেবারে নির্বিঘ্ন করা হয়েছিল। হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছিল ঢাকা রিজেন্সি হোটেল প্রতিটি খেলোয়াড় সেখানকার আতিথিয়েতার প্রশংসা করেছেন।
কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমের নির্দেশানায় নিরাপত্তার বিষয়টি সার্বিক আয়োজন এগিয়েছে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১১ টি দেশের অধিনায়ককে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি উন্মোচনের মধ্য দিয়ে যে আসরের সূচনা করেছিলেন, আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করে তারই পর্দা নেমেছে সোমবার। গত ১৫ নভেম্বর থেকে টানা ১০ দিন মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম মেতেছিল কাবাডি উৎসবে। প্রায় প্রতিটা ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি দর্শক সমর্থন জুগিয়ে গেছেন দলগুলোকে। স্বাগতিক বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, ইরান, চাইনিজ তাইপে তাদের পারফরম্যান্স দিয়ে মুগ্ধ করেছে। সরাসরি সস্প্রচারে ছিল টি-স্পোর্টস। ফলে এই আসর দিয়ে দেশের নারী কাবাডির জনপ্রিয়তাও বেড়েছে বহুগুণ।
বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগের কণ্ঠেও তাই সন্তুষ্টি, ‘বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি। আর এ আয়োজনকে পূর্ণতা দিয়েছে আমাদের নারী দল, দারুণ খেলা উপহার দিয়ে পদক জয়ের মাধ্যমে। এই অর্জনে সকলের অবদান আছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট সকলে এবং আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনেরও সহযোগিতার মাধ্যমে এটা আমরা সফল করেছি।’
তিনটি মহাদেশ মিলেছিল এক মোহনায়। এশিয়া থেকে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, ইরান নেপাল ও চাইনিজ তাইপে। ইউরোপ থেকে জার্মানী ও পোল্যান্ড এবং আফ্রিকা থেকে কেনিয়া, উগান্ডা ও জাঞ্জিবার টুর্নামেন্টটিকে দিয়েছিল বৈচিত্র্য, বহুমাত্রিকতা। দুইটি গ্রুপে প্রথমে লিগ পদ্ধতিতে একে অন্যের সঙ্গে খেলা ছিল সবার। গ্রুপ সেরা ও রানার্স আপ দলকে নিয়ে সেমিফাইনালের লড়াই। সবশেষ উত্তেজনাময় এক ফাইনাল দিয়ে টুর্নামেন্টের আনন্দমুখর সমাপ্তি। শেষ দিনেও মাঠে ছিল প্রতিটি দল। নেচে-গেয়ে, উচ্ছ্বাস নিয়ে বাংলাদেশকে বিদায় বলেছেন সবাই।