
ঢাকা, ২৬ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ ২৫ বছর পর ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ভারতকে।
রান বিবেচনায় টেস্টে এটি সবচেয়ে বড় হার ভারতের। কলকাতায় সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতকে ৩০ রানে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে ভারতকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিল প্রোটিয়ারা।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল হ্যান্সি ক্রনিয়ে-গ্যারি কার্স্টেনের দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নিয়ে তৃতীয়বার ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হল টিম ইন্ডিয়া। এর আগে ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এবং গত বছর নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি ভারত।
গৌহাটিতে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ দিন ভারতকে ৫৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল প্রোটিয়ারা। জবাবে দিন শেষে ২ উইকেটে ২৭ রান তুলেছিল ভারত। টেস্ট জয়ের জন্য ম্যাচের শেষ দিন আরও ৫২২ রান করতে হত ভারতকে। দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ৮ উইকেট।
পঞ্চম দিন প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন নাইটওয়াচম্যান কুলদীপ যাদব। ৫ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার অফ-স্পিনার সিমোন হার্মারের শিকার হন তিনি।
কুলদীপের বিদায়ে ক্রিজে আসা ধ্রুব জুরেলকে ৩ বলের বেশি খেলতে দেননি হার্মার। ২ রানে বিদায় হন জুরেল।
১টি করে চার-ছক্কায় ইনিংস শুরু করেছিলেন ভারত অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্ত। কিন্তু হার্মারের শিকার হয়ে ১৩ রানে সাজঘরে ফিরেন পান্ত। ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিন নম্বরে নামা সাই সুদর্শন। রানের চেয়ে উইকেটে টিকে থাকার দিকেই মনোযোগী ছিলেন তিনি। তার স্ট্রাইক রেটও ছিল ১০এর মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ১৩৯ বল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁ-হাতি স্পিনার সেনুরান মুথুসামির বলে আউট হন সুদর্শন। ১০.০৭ স্ট্রাইক রেটে ১৪ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
৯৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। জুটিতে ৩৫ রান যোগ হবার পর আঘাত হানেন হার্মার। ১৬ রানে সুন্দরকে ফেরান তিনি। সুন্দরকে ফিরিয়ে ১৪ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার করেন ডান-হাতি অফ-স্পিনার হার্মার।
ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েই ক্ষান্ত হননি হার্মার। রানের খাতা খোলার আাগেই নিতিশ কুমার রেড্ডিকে ফিরিয়ে ইনিংসে ষষ্ঠ উইকেট পূর্ণ করেন ।
হার্মারের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতের শেষ দুই উইকেট শিকার করেন দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক স্পিনার কেশব মহারাজ। এতে ৬৩.৫ ওভারে ১৪০ রানে অলআউট হয় ভারত।
ব্যাট হাতে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেন জাদেজা। এই সিরিজের দুই টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পাননি ভারতের ব্যাটাররা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার এমন ঘটনা ঘটল। এর আগে ১৯৬৯/৭০ এবং ১৯৯৫/৯৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সেঞ্চুরি করতে পারেননি ভারতের ব্যাটাররা।
৩৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন হার্মার। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। পাশাপাশি মহারাজ ২টি, মার্কো জানসেন ও মুথুসামি ১টি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ৯৩ ও ৪৮ রানে ৬ উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন দক্ষিণ আফ্রিকার জানসেন। ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন হার্মার।
ভারতের মাটিতে এক সিরিজের দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়লেন তিনি। এছাড়া ভারতের মাটিতে টেস্টে সর্বোচ্চ ২৭ উইকেটেও মালিক হয়েছেন হার্মার। দুই ক্ষেত্রেই হার্মার পেছনে ফেলেছেন সাবেক পেসার ডেল স্টেইনকে।
এ ম্যাচে ৯ ক্যাচ নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইডেন মার্করাম। পেছনে ফেলেছেন ভারতের আজিঙ্কা রাহানের ৮ ক্যাচকে। ২০১৫ সালে গল-এ শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে ৮ ক্যাচ নিয়েছিলেন রাহানে।
এই সিরিজ জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রে ৪ ম্যাচ খেলে ৩ জয় ও ১ হারে ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকলো দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজ হারে পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে নেমে গেল ভারত। ৯ ম্যাচে ৪টি করে জয়-হার ও ১টি ড্র’তে ৪৮.১৫ শতাংশ পয়েন্ট আছে টিম ইন্ডিয়ার।