স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষায় দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি হারানো মবিন

বাসস
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৫

প্রতিবেদন: মো: মজিবুর রহমান

শরীয়তপুর, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস) : পারিবারিক পিছুটানকে উপেক্ষা করেই দোকান কর্মচারি মবিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারান। কবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন এখন সে অপেক্ষায় কাটছে তার দিন।

ডাক্তাররা জানিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি দুটোই ফিরে পাবেন মো: মবিন (১৭)। দেশের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে অসহায় হয়ে পড়া মবিন এখন দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। 

সম্প্রতি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামে গিয়ে মবিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যায় মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন (৬০)। এরপর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম (৫০) দিশেহারা হয়ে পড়লে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন। খেয়ে না খেয়ে মোটামুটি চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু এ চলা থমকে গেছে গত ১৮ জুলাই।

প্রতিদিনের মতো সেদিনও মবিন রাজধানী ঢাকার উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশের ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যান। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। পারিবারিক পিছুটানসহ সকল কিছু ভুলে মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। এরপর মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। একপর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের উপর দিয়ে ঢুকে ডান কানের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি পুলিশের ছোঁড়া ছররা গুলিতে তার চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর মবিনের মিছিলের সাথীরা তাকে প্রথমে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এবং পরে সেখান থেকে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর তারা তাকে নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 

মবিনের বড় ভাই নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, ঘটনার দিন আমি বাসাতেই ছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল আসে। জানতে চায়, আমি মবিনের বড় ভাই কি না? আমি হ্যাঁ বললে অপর প্রান্ত থেকে জানায়, আপনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন। আমি বিলম্ব না করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, ছোট ভাই মবিন গুলিতে আহত হয়ে পড়ে আছে। 
পলাশ জানান, এইচএসসি পাশ করে তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মে গাড়ী চালাতেন। মুবিনকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতোমধ্যে ড্রাইভারের চাকুরিটাও চলে গেছে তার।

এদিকে সংসারে বিধবা মা ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই। মবিনের শারীরিক অবস্থাও ভালো না। আর্থিক অবস্থা খুবই করুণ হয়ে পড়েছে। বাবা না থাকায় সংসারের দায়িত্ব পলাশের ওপর। কিন্তু চাকুরিটি হারিয়ে পলাশও চোখে অন্ধকার দেখছিলেন। 

এদিকে মবিনের পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে চিকিৎসা করালেও মাথার রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। মবিন টাকার অভাবে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন না জেনে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সিএমএইচএ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এছাড়া সেনাপ্রধানের সহায়তায় পলাশ ইতোমধ্যে বিজিবিতে যোগ দিয়েছে। 

এ জন্যে মুবিনের মা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ও  মাননীয় সেনাপ্রধানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাদের জন্য দোয়া করেছেন।

দু’চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারানো মবিন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত দুই যুবদল নেতা বহিষ্কার
সুনামগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত
ইলিশ সংরক্ষণে চাঁদপুরে কোস্ট গার্ডের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম
গুণগতমান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্নের নির্দেশ সেতু সচিবের
নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের অভিযান
শ্রমিক জাগরণের লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে শিমুল বিশ্বাসের আহবান
ডিএমপিতে সেপ্টেম্বর মাসে সংক্ষিপ্ত বিচারে ২৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি
দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশ ও তুরস্ক আলোচনা
শিক্ষার্থী হত্যা : সাবেক ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছসহ পাঁচজন রিমান্ডে
লড়াই করে হারল বাংলাদেশ
১০