চোখ হারিয়েও থেমে যাননি ঠাকুরগাঁওয়ের লামিম

বাসস
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৫২
ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন গ্রামের কিশোর লামিম সেদিন আন্দোলনে গিয়ে ফিরে এসেছিলেন এক চোখ হারিয়ে। ছবি : বাসস

।। জাকির মোস্তাফিজ মিল।।

ঠাকুরগাঁও, ৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। খেলতে যাওয়ার অজুহাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন ১৪ বছরের লামিম হাসান। কেউ ভাবেনি সে দিনই বদলে যাবে তার জীবন। ঠাকুরগাঁওয়ের নারগুন গ্রামের এই কিশোর ছেলেটি সেদিন আন্দোলনে গিয়ে ফিরে এসেছেন এক চোখ হারিয়ে। তবুও তার মনোবলে এতটুকু চির ধরেনি। বরং চোখের আলো হারিয়ে হলেও পেয়েছেন ভবিষ্যতের এক দীপ্ত স্বপ্ন, একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ।

জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলন চলাকালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গুলিতে মারাত্মক আহত হন লামিম। সহযোদ্ধারা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি লামিমের। বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে চোখের অবস্থার। এখন শুধু থেকে গেছে যন্ত্রণা আর চোখ বেয়ে যাওয়া পানি।

তবু হতাশ নয় এ কিশোর। লামিম বলেন, আমার চোখ নেই, কিন্তু আফসোসও নেই। আমার তো শুধু চোখটা নেই, কিন্তু অনেক ভাই তো বেঁচেই নেই। আমি তাদের জন্য দোয়া করি। আর স্বপ্ন দেখি এমন একটা বাংলাদেশের, যেখানে অন্যায়-দুর্নীতি থাকবে না, থাকবে না হানাহানি বা বিভেদ।

ছেলের এমন আত্মত্যাগে গর্বিত বাবা মমিনুল ইসলামও। জলে ভাসা চোখে তিনি বলেন, লামিম যখন গুলিবিদ্ধ হয়, খবর পেয়ে খোঁজ করতে গিয়ে তাকে হাসপাতালে পাই। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য কখনো দিনাজপুর, পরে ঢাকা নিয়ে যাই। বাসার জমি বন্ধক রেখে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু কোনো আফসোস নেই। কারণ আমার ছেলে তার চোখ দিয়ে দেশকে জাগিয়েছে।

তবে এখন চোখে জটিলতা দেখা দিয়েছে লামিমের। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। পরিবারের দাবি, তাকে যেন বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

লামিমের বাবা মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার যা করেছিল তা সামান্য। সহযোগিতা দরকার। ছেলে দেশের জন্য লড়েছে, এখন দেশ যেন তার পাশে দাঁড়ায়।

শুধু লামিম নন, এমন আরও বহু শিক্ষার্থী এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন গুলির ক্ষতচিহ্ন। অনেকে চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন নীরবে। তাদের একজন আহত আন্দোলনকারী মেহরাব হোসেন বলেন, এক বছর হয়ে গেছে কিন্তু এখনো অনেকেই চিকিৎসা পায়নি। আমরা চাই, আগে যেন আমাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়। যারা অঙ্গ হারিয়েছে, তাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা জানিয়েছেন, জেলায় তিন শতাধিক আহত আন্দোলনকারীকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাকি যারা আছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজে গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
চাপের মুখে ডিজিটাল নীতিমালা শিথিল করতে যাচ্ছে ইইউ
দক্ষিণ আফ্রিকায় হতে যাচ্ছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্জন
নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আনসার বাহিনী প্রস্তুত : কুমিল্লা রেঞ্জের পরিচালক মাহবুবুর রহমান
বগুড়ায় তারেক রহমানের পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ
খাগড়াছড়িতে জলবায়ু সহনশীল ও সমন্বিত চাষাবাদ বিষয়ে কর্মশালা
টিআরসিদের দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান কেএমপি কমিশনারের
বরিশালে নতুন কমিশনার ও ডিসির সঙ্গে কর্মকর্তাদের মতবিনিময়
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও পরিবারের সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ সিআইডির
১০