
চট্টগ্রাম, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহতরা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা এই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফি আলম রায়ে সন্তোস প্রকাশ করে বলেন, আমি সকাল থেকে এই রায়ের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে ট্রাইব্যুনাল কাঙ্ক্ষিত রায় দিয়েছে। সকল নাগরিকের মতো আমিও আনন্দিত ও সন্তুষ্ট।
তিনি চিহ্নিত সকল খুনি, হামলাকারী এবং যারা নির্দেশ দিয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কোহিনুর আখতার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি আর কখনো আমার ছেলেকে ফিরে পাব না । তবে হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের খবর শুনে কিছুটা শান্তি বোধ করছি।
কোহিনুর আখতার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে বলেন, রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি শান্তি পাব না।
তিনি সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
একটি সুন্দর, শোষণমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন শান্ত। তার ছেলের আত্মত্যাগ সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কোহিনুর আখতার।
শহীদ শান্তর বাবা জাকির হোসেন বলেন, তার ছেলে আর ফিরে আসবে না। ছেলে হত্যার বিচার হয়েছে জেনে তিনি কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছেন। তিনি রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানান।
ছাত্রলীগের গুলিতে এক চোখ হারানো জুলাইযোদ্ধা শুভ হোসেন অভ্যুত্থান-সম্পর্কিত সব মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। তিনি ঘোষিত রায় কার্যকর করা এবং আহত ও নিহতদের সংশ্লিষ্ট সব মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন, যাতে ভবিষ্যতে আর এই নির্মমতার শিকার না হয়।
শুভ হোসেন চট্টগ্রামে গুলির ঘটনায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। যাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও যুবলীগ নেতা বাবর।
তিনি আরও বলেন, হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আ জ ম নাসির উদ্দিন ও রেজাউল করিমসহ সকল অপরাধীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
শুভ হোসেন জোর দিয়ে বলেন, ‘শহীদ ওয়াসিমের আত্মা শান্তি পেতে হলে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি জুলাই মামলায় অযথা হয়রানি না করার আহ্বান জানান এবং সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৬ জন শহীদ এবং ৯০০ জনেরও বেশি আহত হন, যাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, পুলিশ, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও হামলায় স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছেন। এসব ঘটনায় মোট ১৫১ টি মামলা দায়ের করা হয়। তবে প্রায় দেড় বছর পর মাত্র একটি মামলা শেষ হয়েছে।
শহীদ শান্তর মা কোহিনুর আখতার তদন্তের ধীরগতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই দেশে সবসময় বিচার নিয়ে চিন্তা করতে হয়। শান্ত হত্যা মামলায় আমরা তেমন অগ্রগতি দেখিনি। আমরা সব মামলা ও বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানাই।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম, শান্ত ও ফারুক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাদের সহযোগীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ৩৬ দিনের জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে মোট ১৬ জন শহীদ হয়েছেন।