চাকরি করতে ঢাকা এসে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল কিশোর ওমর ফারুক

বাসস
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ১৩:৩৭
শহীদ ওমর ফারুক -ছবি : বাসস

প্রতিবেদন: আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলা, ১৭ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলোতে যেসব তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেছে, ১৭ বছরের কিশোর মো. ওমর ফারুক তাদেরই একজন। ১৯ জুলাই দুপুরের খাবার খেতে কারখানা থেকে বের হওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর ২ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোর ওমর সংসারের অভাবের কারণে প্রায় ৩ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমায়। সেখানে গিয়ে রায়েরবাগ এলাকার একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয়।

ওমর ফারুক ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কারখানা থেকে দুপুরের খাবার খেতে বের হওয়ার পথে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় তার শরীরে দুটি গুলি লাগে—একটি ফুসফুসে এবং অপরটি বগলের নিচে। এরপর তাকে উদ্ধার করে মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের বেডে ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কিশোর ওমর ফারুক মারা যায়। পরদিন ৩ আগস্ট শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে ভোলার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করেন।

শহীদ ওমর ফারুক ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাহাদুর চৌমুহনী এলাকার ফয়েজউল্লাহ মুন্সির ছেলে। বাবা ও বড় ভাই এমরানসহ তারা তিনজন ঢাকার রায়েরবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।

ওমর ফারুকের বাবা ফয়েজউল্লাহ রায়েরবাগ এলাকার একটি মসজিদের খাদেম এবং বড় ভাই দর্জির কাজ করতেন। ওমর ফারুক সেখানেই একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। তাদের দুই ভাই ও দুই বোন ছিলেন।

ওমর ফারুকের বড় ভাই এমরান জানান, সংসারের অভাবের কারণে ওমর ফারুক বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি। প্রায় ৩ বছর আগে ঢাকায় এসে একটি কয়েল ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেয় সে। সে আন্দোলনকারী ছিল না। তবে ১৯ জুলাই আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলার সময় ফ্যাক্টরি থেকে দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাওয়ার পথে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় স্বজনদের অনেককেই টানা ১৩ দিন সেখানে কাটাতে হয়েছে। তবে ওমর ফারুককে আর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় সে।

শুক্রবার ভোরে মারা গেলেও আইনি জটিলতার কারণে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এরপর ওমর ফারুককে গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ওমর ফারুকের মৃত্যুর পর এখনো কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। প্রশাসন কিংবা কোনো সংগঠন থেকেও ওই পরিবারকে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে জানান, সরকার অন্যান্য জেলার মতো ভোলার শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে। সে অনুযায়ী পরিবারগুলোকে খুব দ্রুতই সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাকা-চট্টগ্রাম পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন উদ্বোধন আগামীকাল
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে ফেনীতে বিএনপির মিলাদ ও দোয়া মাহফিল
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ২
খুলনায় খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল
পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না : গোলাম পরওয়ার
খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে শেরপুরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
রাজশাহীতে খালেদা জিয়ার জন্মদিনে যুবদল ও ছাত্রদলের দোয়া মহফিল
মাহেরিন চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল
আড়াই মাসে গাজায় ১৭৬০ জন নিহত : জাতিসংঘ
আহত হাতিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে বনকর্মী ও চিকিৎসকসহ আহত ১৫
১০