‘আমি আমার ছেলের আত্মত্যাগে গর্বিত’ : শহীদ সাগরের বাবা

বাসস
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ২০:০৯
শহীদ রিদওয়ান হোসেন সাগর -ছবি : বাসস

 
প্রতিবেদন : মো. আব্দুল কাইয়ুম

ময়মনসিংহ, ২৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ‘আমার ছেলে সবসময় দেশকে ভালোবাসত। কিন্তু একদিন দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবে, তা কখনও কল্পনা করিনি। তবু আমি আমার ছেলের আত্মত্যাগে গর্বিত।’ 

আবেগভেজা কণ্ঠে বলছিলেন ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ রিদওয়ান হোসেন সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান আসাদ।

রিদওয়ান হোসেন সাগর শুধু একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন না, ছিলেন এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। মানুষের সেবা, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে তিনি ছিলেন সর্বদা সক্রিয়। 

সাধ্যমতো সবার পাশে দাঁড়াতেন তিনি। ময়মনসিংহ শহরে কেউ চিকিৎসার প্রয়োজনে এলে প্রথমেই যাকে খবর দেওয়া হতো, সেই ছিল সাগর।

সাগর ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন। তিনি কোনদিন সকালের নাশতা না করেই বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় নামতেন। ১৭ জুলাই দুপুরে আন্দোলন শেষে বাড়ি ফিরে সেলুন থেকে চুল-দাড়ি ছেঁটে এসেছিলেন। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। পরদিন ১৮ জুলাইও আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।

১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে সাগর একজনের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাচ্ছেন বলে বাসা থেকে বের হন। 

কিন্তু তার আর জীবিত অবস্থায় ফিরে আসা হয়নি। সন্ধ্যার পর এক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোনে জানানো হয়- সাগর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।

সঙ্গে সঙ্গে সাগরের বাবা ও চাচা হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, হাসপাতালের মেঝেতে ছেলের নিথর দেহ পড়ে আছে। তার বাম পাঁজরে একটি ছিদ্র ও পেটের ডান পাশে বড় গুলির ক্ষত। পরে রাত ৮টার দিকে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সাগরের মরদেহ বাসায় পৌঁছে দেয়। পরদিন সকাল ১০টায় জানাজা শেষে মাদ্রাসা কোয়ার্টার কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শহীদ রিদওয়ান হোসেন সাগরের বাবা -ছবি : বাসস

সাগরের বাবার দাবি, ১৯ জুলাই নগরীর মিন্টু কলেজ এলাকায় চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যৌথভাবে হামলা চালায়। এসময় সাবেক এমপি মোহিত-উর-রহমান শান্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং তার চাচাতো ভাই ফয়জুর রাজ্জাক ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল পাঠান সরাসরি সাগরকে গুলি করে হত্যা করেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সাগরকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দেখতেও আসেননি। বরং জানিয়ে দেন-হাসপাতালের উপ-পরিচালকের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এতে স্পষ্ট, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড।

পরবর্তীতে হত্যার প্রমাণ নষ্ট করতে মিন্টু কলেজ ও আশপাশের এলাকার সকল সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সাগরের পিতা আজও কান্না চেপে বলেন, ‘সব বাবা-মা চায়, সন্তান ভালোভাবে বাঁচুক। আমি সে স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে যে আদর্শের জন্য প্রাণ দিয়েছে, তা কোনো দিন বৃথা যাবে না।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট দিবস উদযাপন
বাতিল হচ্ছে ১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট 
বাংলাদেশের রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজিম উদ্দিনকে দেখতে গেলেন ডা. রফিক
সার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে: কৃষি উপদেষ্টা
ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ হারল বাংলাদেশ
রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে সহায়তা দেবে কসোভো
এআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া বিশ্বের প্রথম ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি 
আল-ফাশের হাসপাতালে ৪৬০ জন নিহতের খবরে হতবাক ডব্লিউএইচও
সুদানে আরএসএফ’র বর্বরতার নিন্দা জানালো ইইউ
১০