ঢাকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) ‘কর্মসংস্থান ইনজুরি প্রকল্প (ইআইএস)’ নামে একটি প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে যাতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) পোশাক খাতের কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু বা স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যায়।
এই বিষয়ে, আজ বেপজা, আইএলও এবং জিআইজেড-এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইআইএস প্রকল্পের মাধ্যমে, ইপিজেড-এর পোশাক খাতের কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সুবিধা পাবেন।
প্রাথমিকভাবে, এই প্রকল্পটিতে পোশাক খাতের শ্রমিকরা উপকৃত হবেন, তবে ধীরে ধীরে অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের জন্যও এটি সম্প্রসারিত হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের জুন মাসে দেশের পোশাক খাতে ‘ইআইএস-পাইলোট’ নামে একটি অনুরূপ প্রকল্প শুরু হয়েছিল এবং এখন ইপিজেড গুলোতে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের জন্য এই ’লেটার অব ইনটেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আইএলও এবং জিআইজেড এর কারিগরি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের আর্থিক সহায়তায় বেপজার মাধ্যমে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
লেটার অব ইনটেন্ট স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ইপিজেড কর্মীদের জন্য ইআইএস প্রকল্প চালু করার উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘এই প্রকল্পটি ইপিজেডগুলিতে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করবে, যা বাংলাদেশে টেকসই শিল্প প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।’
তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন যে, এই প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইপিজেড কর্মীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোকে উন্নত এবং সম্প্রসারিত করবে।
বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন যে, শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ইপিজেডে হাসপাতাল বা চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিক ও শিশুদের যত্নের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
অধিকন্তু, বেপজা পরিচালিত স্কুলগুলো ইপিজেডের শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ভর্তুকিযুক্ত শিক্ষা প্রদান করে। বেপজা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করে। চেয়ারম্যান ইপিজেডগুলোতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য আইএলও, জিআইজেড এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ক্রেতাদের ধন্যবাদ জানান।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পওটিয়াইনেন ইআইএস প্রকল্পে বেপজার অংশগ্রহণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি শ্রমিক কল্যাণের জন্য একটি খুব ভালো পদক্ষেপ। আমি বেপজার বিনিয়োগকারীদের ধন্যবাদ জানাই কারণ তারাই এটি বাস্তবায়ন করবেন। আমি এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্য আশাবাদী।’
অনুষ্ঠান চলাকালীন, ইআইএস পাইলট প্রকল্পের সিনিয়র টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ড. আনা মেরি লা রোসা একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে ইআইএসের সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করেন।
বর্তমানে, বেপজা সারা দেশে আটটি ইপিজেড পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল।
এছাড়াও, পটুয়াখালী এবং যশোর জেলায় আরও দুটি ইপিজেডের উন্নয়ন শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, বেপজা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বেপজা ৪৫১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে, যেখানে ৫,২৬,০০০ কর্মী নিযুক্ত রয়েছে।
এখন পর্যন্ত, ইপিজেডগুলোতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬.৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট রপ্তানি ১১৫.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিআইজেড বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টয়ানকা স্টিচ, তার সহযোগী ড. সিলভিয়া পপ, জিআইজেড বাংলাদেশের উপদেষ্টা ড. রোশান আফরোজ, ইআইএস স্পেশাল ইউনিটের উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম, আইএলও জেনেভা মিশনের আন্দ্রে পিকার্ড, আইএলও ঢাকার সাদ গিলানি, আইএলও ঢাকা এবং জেনেভার প্রতিনিধিরা, জিআইজেড প্রতিনিধি, ইপিজেড বিনিয়োগকারী, ব্র্যান্ড ক্রেতা প্রতিনিধি এবং বেপজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।