ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুইস আমদানির উপর ৩৯ শতাংশের বিশাল শুল্ক আরোপের প্রথম ক্ষতি হতে পারে সোনা পরিশোধন খাত। কারণ, এটি প্রকাশ পেয়েছে যে কিছু সোনার বার শুল্কের সম্মুখীন হবে।
জুরিখ থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
শুক্রবার মার্কিন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এক কিলোগ্রাম বা ১০০ আউন্স (২.৮ কিলোগ্রাম) ওজনের সোনার বার তথাকথিত পারস্পরিক শুল্কের আওতায় রয়েছে। তার পরেও মার্কিন ফিউচার বাজারে সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ৩১ জুলাইয়ের এই স্পষ্টীকরণটি গত বৃহস্পতিবার ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রথম প্রকাশিত হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিউচার্স বাজার কমেক্সে এক কিলোগ্রাম ওজনের স্বর্ণবারের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া বুলিয়নের প্রধান সরবরাহকারী দেশ হলো সুইজারল্যান্ড।
সুইজারল্যান্ড ব্যাপকভাবে প্রত্যাশা করছিলো যে এ ধরনের সোনার বারগুলোকে একটি ভিন্ন শুল্ক কোডের অধীনে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে। যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক ‘পারস্পরিক’ শুল্ক থেকে বাদ দেয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য সুইস কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা খালি হাতে ফিরে এসেছেন। তাদের রপ্তানি পণ্যের উপরও এখন ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এই খবরটি সুইস সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছে। কারণ, সোনার ব্যবসা তার বাণিজ্য ভারসাম্যের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে।
সাইটে জেস্তিওনের বিনিয়োগ কৌশল প্রধান জন প্লাসার্ড বলেন, সুইজারল্যান্ডের পক্ষে আশা করা সরলতা ছিল যে স্বর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক থেকে বাদ যাবে। সুইস রিফাইনারির ভালো সুনামও ৩৯ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা সামলাতে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এজন্য কিছু স্বর্ণ পরিশোধন ব্যবসা সম্ভবত বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্পের মতো অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হবে। কারণ বেলজিয়াম শহর অ্যান্টওয়ার্পে উৎপাদিত সোনার বারগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য প্রযোজ্য ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হবে।
পরিশোধন ক্ষমতার কেন্দ্র: সুইজারল্যান্ডে বিশ্বের চারটি বৃহত্তম স্বর্ণ শোধনাগার রয়েছে, যার মধ্যে বৃহত্তম হল দেশের ইতালীয় ভাষাভাষী অংশ বালের্নায় অবস্থিত ভালকাম্বি।
তারা খনি, পুনর্ব্যবহৃত গহনা বা নিম্ন-বিশুদ্ধতা বার থেকে আসা অপরিশোধিত সোনা আমদানি করে উচ্চমানের বারে পুনর্নির্মাণের জন্যে সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী সোনার বাণিজ্য কেন্দ্র পরিণত করে তুলেছে। এই বারগুলো পরে গহনা, ঘড়ি তৈরি, শিল্প এবং প্রযুক্তি পণ্যের পাশাপাশি ব্যাংকিং খাত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের বাজারে পুনরায় চালু করা হয়।
সুইস ফেডারেল কাস্টমস প্রশাসনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটি ২০২৩ সালে ২,৩৭২ টন সোনা আমদানি করেছে এবং পুনঃরপ্তানি করেছে ১,৫৬৪ টন। এই রপ্তানির মূল্য ৮৮ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কের (বর্তমান হারে ১০৯ বিলিয়ন ডলার) কাছাকাছি। যার প্রধান ক্রেতা চীন ২৫.১ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক এবং ভারত ১৩.১ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক।
সুইস অ্যাসোসিয়েশন অফ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অফ প্রিসিয়াস মেটাল অনুসারে, রূপা এবং প্যালাডিয়ামের মতো অন্যান্য মূল্যবান ধাতুসহ এই খাতটি দেশে ১,৫০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ও ১,০০০ পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
স্টেট সেক্রেটারিয়েট ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (এসইসিও) অনুসারে ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মোট পরিশোধিত সোনার ৩৪ শতাংশ ছিল সুইজারল্যান্ডে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বৃদ্ধি: গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুইস সোনা রপ্তানি ১১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কে উন্নীত হয়েছে যা ২০২৩ সালে ৬.১ বিলিয়ন থেকে প্রায় দ্বিগুণ ছিল।
এএফপিকে দেওয়া সুইস কাস্টমসের তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তারা আকাশচুম্বী হয়ে ৩৯.২ বিলিয়ন ফ্রাঙ্কে পৌঁছেছে যা ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ছিল।
২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ৩৭.৬ বিলিয়ন ফ্রাঙ্ক মূল্যের সোনা রপ্তানি করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় প্রান্তিকে চালান তীব্রভাবে কমে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ফ্রাঙ্কে নেমে আসে।
বৃহস্পতিবার সুইস প্রেসিডেন্ট কারিন কেলার, সাটার সুইজারল্যান্ডের সাথে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি এবং এর ফলে উচ্চ শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের মূল্যায়নের সাথে তীব্র দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে সোনা রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে ঘাটতি বেড়েছে।
মঙ্গলবার, সুইস সংবাদপত্র লে টেম্পস উল্লেখ করেছে যে সুইজারল্যান্ডের উপর শুল্ক গণনা করার জন্য ‘হোয়াইট হাউস কেবলমাত্র ২০২৪ সালের তথ্যের উপর নির্ভর করেছিল বলে মনে হচ্ছে। যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল।
পত্রিকাটি জানায়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে "নিরাপদ বিনিয়োগ" হিসেবে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সুইস রপ্তানি বেড়ে যায়।