চট্টগ্রাম, ২৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন-এর সদস্য ড. আফরোজা বিলকিস।
তিনি বলেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা চর্চা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ কম্পিটিশন এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে এবং এ আইন বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করে।
রোববার (২৪ আগস্ট) চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কনফারেন্স হলে “প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যাবলী বিষয়ক অবহিতকরণ”- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। চিটাগাং চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা এতে সভাপতিত্ব করেন।
ড. আফরোজা বিলকিস বলেন, এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত করে যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে বা কারসাজির মাধ্যমে যাতে কেউ দ্রব্যমূল্য বাড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করা আর সে লক্ষ্যেই এ ধরণের আইন তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাজারে অবৈধ যোগসাজস রোধ করে, সব প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ করা প্রতিযোগিতা কমিশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
ড. আফরোজা বিলকিস বলেন, আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কমিশন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। একই সাথে ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে উচ্চতর গবেষণার মাধ্যমে আইনকে আরো সহজ ও যুগোপযোগী করতে কমিশন কাজ করছে।
সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্যখাতে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু অসাধু কার্যক্রম যেমন সিন্ডিকেট, কারসাজি ও একচেটিয়া ব্যবসার কারণে বাজারে স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই জায়গাটিতেই বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো- ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা, বাজারে স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও সর্বোপরি ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা। আইনটিকে বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে এক নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এটি একটি সুষ্ঠু এবং ন্যায্য ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করছে।
মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা আরো বলেন, এর পূর্ণ সুফল পেতে হলে, নিয়মিত পর্যালোচনা, বাস্তবায়ন কৌশল উন্নত করা ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বক্তারা বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই প্রতিযোগিতা আইনকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতা কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ব্যবসায়ী ও মিডিয়াসহ সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও কমিশনকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের পরিচালক বিমলেন্দু ভৌমিক, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক মো. সোলায়মান, উইম্যান চেম্বারের পরিচালক আমিনা শাহিন, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান, বিএসআরএম’র সঞ্জয় কমুার ঘোষ ও মো. ইসমাইল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় সভায় চেম্বারের সদস্য, জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার ও রাবার ওনার্স এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।