
ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ডিসিসিআই জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক পলিসি’-এর দ্বিতীয় সংষ্করণ এবং ‘ট্যাক্স গাইড ২০২৫-২৬’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গ্রন্থ দু’টির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)-এর চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআই জার্নালের প্রধান সম্পাদক ড. জায়েদী সাত্তার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কর ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উন্নয়ন বিষয়ক নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তাই এ বিষয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে ঢাকা চেম্বারের গবেষণা কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘রুল অব অরিজিন’ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য বিষয়ের উপর সুনির্দিষ্ট গবেষণাপত্র ও প্রকাশনা প্রণয়নের মাধ্যমে ডিসিসিআই দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা ওঠে এসেছে, যা বেশ উদ্বেগের বিষয়। সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দূরীভূত হবে। তবে এক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের প্রতি বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক বিদ্যমান নীতিমালার আশু সংষ্কারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
ড. জায়েদী সাত্তার আশা প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা চেম্বারের প্রকাশিত জার্নালটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, গত চার দশক ধরে ঢাকা চেম্বার তার সদস্যদের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস আইনের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য ‘ডিসিসিআই ট্যাক্স গাইড’ প্রকাশ করে আসছে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে করজাল সম্প্রসারণ, রাজস্ব প্রদানের প্রক্রিয়ার পুরোপুরি অটোমেশন নিশ্চিতকরণ এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সহজীকরণ ও সংস্কারের ওপর জোর দেন তাসকীন আহমেদ।
তিনি বলেন, দেশের বেসরকারিখাত ও অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তথ্যনির্ভর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি খাতভিত্তিক সুপারিশমালা প্রণয়নে ডিসিসিআই প্রতিনিয়ত কাজ করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত ‘ডিসিসিআই জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনোমিক পলিসি’-এর দ্বিতীয় সংষ্করণে সামষ্টিক অর্থনীতি, দক্ষতা উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, এলডিসি উত্তরণ, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থাপনাসহ রাজস্ব ও মুদ্রানীতি প্রভৃতি বিষয় এই গবেষণাপত্রে স্থান পেয়েছে। যা সরকার ও বেসরকারিখাতে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়ক হবে।
এনবিআর-এর সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ঢাকা চেম্বার কর্তৃক প্রকাশিত ট্যাক্স গাইডটি দেশের সকল স্তরের করদাতাদের অনলাইন কর প্রদান প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করবে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ করদাতা অনলাইন প্রক্রিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে করা প্রদান করেছে এবং ৫০ লাখ মানুষ চলতি বছরে এ ব্যবস্থায় কর প্রদান করবে বলে এনবিআর প্রত্যাশা করছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অনলাইনভিত্তিক কর প্রদান ব্যবস্থা জনগণের মাঝে স্বস্তি আনার পাশাপাশি হয়রানি দূর করবে, সেই সাথে দেশের সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
এ সময় ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।