বাসস
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:৫০

নওগাঁয় প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন দুই তরুণ উদ্যোক্তা

নওগাঁয় রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এলাকার নিয়মিত কৃষক এবং তরুণরা। ছবি: বাসস

বাবুল আখতার রানা

নওগাঁ, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পাশাপাশি দুটি ফুলকপির খেত। খেত দুটিতে সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে হলুদ, সবুজ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি। রঙিন ফুলকপি বিদেশি সবজি হলেও জেলার দুই তরুণ উদ্যোক্তা রঙিন ফুলকপির চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন। 

তাদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এলাকার নিয়মিত কৃষক এবং তরুণরা। জেলার প্রথম রঙিন ফুলকপির বাগান দেখতে ভিড় করছেন আশেপাশের এলাকার মানুষ।

জেলা সদরের হাঁপানিয়া এলাকার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমী’র কারিগরি সহায়তা ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে সবুজ, হলুদ ও বেগুনি জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন তরুণ উদ্যোক্তা মিনাজুল ইসলাম পিন্টু ও সাজু রহমান। প্রত্যেকে ৮ শতক করে মোট ১৬ শতক জমিতে ৮০০ টি করে মোট ১৬০০ টি রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। 

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রথম রঙিন ফুলকপির চাষ হয়। তবে নওগাঁয় এবারই প্রথম রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। সাধারণ ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। এগুলো কাঁচা সালাদ হিসেবে এবং রান্না করেও খাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রঙিন ফুলকপি বাংলাদেশে খুব কম চাষ হলেও গ্রাহকের চাহিদা ও আগ্রহের কারণে এটি কৃষিপণ্য হিসেবে কৃষকের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।    

জেলা সদরের হাঁপানিয়ার কসবা গ্রামের ইয়াকুব মন্ডলের পুত্র মিনাজুল ইসলাম পিন্টু (৪০) এবং ইছা মোল্লার পুত্র সাজু রহমান (৩৩) -এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা পড়ালেখায় প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুতে পারেন নি। তাই জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন কৃষি কাজ। 

তারা জানান, বেশি লাভের আশায় নতুন নতুন সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করেন তারা। এতে অন্য সবজির তুলনায় দাম বেশি পাওয়া যায়। প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হওয়ায় খুব খুশি তারা। এই মৌসুম শেষ হলে তারা একই জমিতে বোরো ধান চাষ করবেন।

মিনহাজুল ইসলাম পিন্টু বাসস'কে বলেন, প্রতিদিনই রঙিন ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। আকারে বড় এবং দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। এ বছর অন্যান্য কপির দাম কম হলেও রঙিন ফুলকপির দাম বেশ ভালো। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে লাভও বেশি। আর চারা রোপণের মাত্র ৬৫-৭০ দিনের মধ্যেই কপি বিক্রি করা যায়। একেকটি কপির ওজন হয় ১ থেকে দেড় কেজি। রঙিন ফুলকপি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও সুস্বাদু। এর বৈশিষ্ট্য হলো এ কপি আধাসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়।

সাজু রহমান বলেন, স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমী আমাদের মোট ১৬০০ রঙিন ফুলকপির চারা দেয়। আমরা যখন জমিতে ফুলকপি চাষ শুরু করি তখন অনেকেই বলেছিলেন এসব কপি এলাকায় ভালো হবে না। কেউ খাবেও না। আর খেতে ভালো না হলে বিক্রিও হবে না। তবে আমরা কারো কথা না শুনে দুজনে মোট ১৬ শতক জমিতে ১৬০০ চারা রোপণ করি। দুজনের খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। প্রতি পিচ রঙিন কপি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। আশা করছি এ মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো। 

রঙিন ফুলকপি দেখতে এসে আকবর আলী ও আবিদা দম্পতি বাসস’কে বলেন, অনেক আগে টিভিতে দেখেছি রঙিন ফুলকপি। কিন্তু বাস্তবে দেখা হয়নি। এখানে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে শুনলাম এলাকার তরুণ না কি বিভিন্ন জাতের রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন। তাই আমরা বাস্তবে দেখতে এসেছি। সবুজ, হলুদ ও বেগুনি জাতের রঙিন ফুলকপিগুলো দেখে আমরা অভিভূত। লোভ সামলাতে না পেরে ৩টি রঙিন ফুলকপি কিনে নিলাম।

মৌসুমীর কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বাসস’কে বলেন, রঙিন ফুলকপি দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, বিটা করোটিন ও ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যানথোসায়ানিন রয়েছে। আগামীর কৃষিতে রঙিন ফুলকপি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা যায়। 

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসস’কে বলেন, এই রঙিন ফুলকপি নওগাঁ জেলাতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এটি মূলত শীতকালে হয়। আর এই রঙিন ফুলকপিতে অতিরিক্ত কেরোটিন ও খনিজ উপাদান বেশি থাকে। যা স্বাভাবিক ফুলকপির চেয়ে অনেক বেশি। আমরা কৃষকদের এই ধরনের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছি এবং কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।