খুলনা, ১৫ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বিজেএমসি’র এ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষক, বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের জাজ ও সফল সংগঠক হিসেবে এগিয়ে চলেছেন খুলনার কৃতি সন্তান মুরাদুল ইসলাম। 

জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে একজন সেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক তিনি। জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খুলনা জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে ১০টি স্বর্ণপদক এবং জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন। এছাড়া ২০০, ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়েও কৃতিত্ব অর্জনকারী খেলোয়াড় হিসেবে সকলের নজড়ে পড়েছেন। রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে আরো অনেক কৃতিত্বপূর্ণ অর্জন। 

একসময়ের কৃতি খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠক মুরাদের বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলা সদরের দিঘলিয়া গ্রামে। ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। শত বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি আজ একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক।

মুরাদুল ইসলাম বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিজেএমসি’র অধীনস্থ যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জেজেআই)’র সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও প্রশাসন বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের জাজ ও বিজেএমসি’র এ্যাথলেট প্রশিক্ষক হিসেবে।

মুরাদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে তার বাবা আব্দুল হাকিমের মৃত্যুর পর সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। চার ভাই-বোনকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার চালানো মায়ের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে। লেখাপড়ার খরচ বহন করা দু:সাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। অন্যের পুরানো বই দিয়ে কোনমতে ভাই-বোনদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়েছে। একদিকে দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া, পাশাপাশি এ্যাথলেটিক্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি।

কিভাবে এ্যাথলেটিক্সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন সবসময় সে চিন্তাই করতেন মুরাদ। কিন্তু ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ এ্যাথলেটিক্সের অনুশীলনেরর পর প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হতো। কিন্তু তাদের সে ধরনের আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা। শুধুমাত্র অদম্য সাহস আর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া ওয়াইএমএ এবং ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অনুশীলণ শুরু করেন। 

পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক মাস্টার খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ এবং উৎসাহ দেখে তাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। এভাবে নিয়মিত প্রাকটিস চালিয়ে যেতে থাকেন। পরবর্তীতে একই গ্রামের সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ খান জহুরুল হক তাকে বিজেএমসিতে খেলোয়াড় হিসেবে নিয়োগ দেন। সেখান থেকে সাপ্তাহিক হারে কিছু টাকা পেতেন। সেটা দিয়ে অনুশীলণ চালিয়ে যেতে থাকেন। এভাবে ১৯৮৮ সালে তার হাত ধরেই বিজেএমসি’র মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে পথচলা শুরু। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত মিলজার হোসেন, জাতীয় এ্যাথলেট খান অলিয়ার রহমানের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে ক্রীড়া জগতে তার সাফল্য আসতে শুরু করে। ঘুরে যায় জীবনের মোড়। 

তিনি জানান, ১৯৯০-৯৪ সাল পর্যন্ত বিজেএমসি’র কেন্দ্রীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার হার্ডলে তিনি রেকর্ড গড়েন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল এ্যামেচার এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায় আইএএএফ লেভেল-১ ইয়ুথ কোচেস ট্রেনিং সম্পন্ন করে লেভেল ওয়ান কোচের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হন। একই বছর ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক ভ্যাটার্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের হয়ে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গ্লোবাল প্রতিযোগিতার প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলের টিম অফিশিয়াল হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৩ সালে জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে সেরা সংগঠকের পুরস্কার লাভ করেন। 

তিনি খুলনা জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রশিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। ঐতিহ্যবাহী দিঘলিয়াা ওয়াাইএমএ ও দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সদস্য এবং দিঘলিয়া নওজোয়ান একাদশ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্লাবটিকে পরিচালনা করছেন।