ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জ্বালানিবাহী একটি নৌকায় আগুন ধরে যাওয়ার পর সেটি উল্টে গিয়ে অন্তত ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
কিনশাসা থেকে এএফপি জানায়, উত্তর-পশ্চিম কঙ্গোর কঙ্গো নদীতে মঙ্গলবার একটি কাঠের নৌকায় দুই শতাধিক যাত্রী ছিলেন। সেখানেই হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান জাতীয় সংসদের প্রতিনিধি দলের সদস্য জোসেফিন-প্যাসিফিক লোকুমু।
ঘটনাটি ঘটেছে ইকুয়েতুর প্রদেশের রাজধানী এমবানডাকার কাছে, যেখানে রুকি ও কঙ্গো নদী একত্রিত হয়েছে। কঙ্গো নদী বিশ্বের গভীরতম নদী।
লোকুমু জানান, 'প্রথম দিনে ১৩১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী দুই দিনে আরও ১২টি দেহ পাওয়া যায়। বেশির ভাগ দেহ পুড়ে গেছে।'
স্থানীয় সমাজকর্মী জোসেফ লোকোন্ডো জানান, তিনি নিজে কিছু দেহ দাফনে সহায়তা করেছেন এবং মৃত্যুর প্রাথমিক সংখ্যা ১৪৫ বলে উল্লেখ করেন—কেউ পুড়ে, কেউ ডুবে মারা গেছেন।
শনিবার দুপুর পর্যন্ত সরকারিভাবে নির্ধারিত মৃতের সংখ্যা জানানো হয়নি।
শুক্রবারই এমবানডাকায় গণশবদাহ শুরু হয়। স্থানীয় সাংবাদিক এরিক লিয়েঙ্গে একাম্বার ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, কফিনবাহী গাড়ি এসে পৌঁছায় এবং রেড ক্রস কর্মীরা সেগুলো একটি পার্কে নিয়ে যান। বিশাল তাবুর নিচে কফিনগুলো রাখা হয়।
একটি কফিনের সামনে একটি নারীর ছবি টাঙানো ছিল। সেখানে লেখা: ‘মামান বোলাঙ্গি সুজান, আমরা কখনো তোমাকে ভুলব না।’
অনুষ্ঠান শেষে রেড ক্রস ও স্বেচ্ছাসেবীরা মৃতদেহ দাফন করেন। অনেক পরিবার নিজ হাতে স্বজনের মরদেহ গ্রহণ করেন।
নিখোঁজদের খোঁজ চলছে
লোকুমু জানান, একটি রান্নার চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা নৌকায় রাখা জ্বালানির সঙ্গে সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটায়।
তিনি বলেন, 'এক নারী চুলা জ্বালানোর সময় কাছাকাছি রাখা জ্বালানিতে আগুন ধরে যায়। এতে বহু নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়।'
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, নদীর মাঝখানে আগুনে পুড়তে থাকা একটি লম্বা নৌকা। আশপাশে ছোট নৌকায় মানুষজন দাঁড়িয়ে বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছে।
নৌকাটিতে ঠিক কতজন যাত্রী ছিলেন, তা জানা যায়নি। তবে লোকুমু বলেছেন, সংখ্যাটি ‘শত শত’ হতে পারে।
লোকোন্ডো জানান, কিছু যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এখনও অনেক পরিবার তাদের স্বজনদের খোঁজে উদ্বিগ্ন।
শনিবারও অনুসন্ধান চলেছে। তবে এক মানবিক সহায়তাকর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, 'দুর্যোগের তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ায় জীবিত কাউকে পাওয়া বা আরও মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।'
আফ্রিকার কেন্দ্রে অবস্থিত বিশাল দেশ কঙ্গোর আয়তন ২৩ লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি। দেশটিতে চলাচলের উপযুক্ত সড়ক কম হওয়ায় মানুষজন নদীপথে যাতায়াতে নির্ভর করে। ফলে নৌ-দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে এবং প্রাণহানিও হয় ব্যাপক।
এর আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইকুয়েতুরেই আরেকটি নৌকাডুবিতে অন্তত ৪৭ জন মারা যান। একই বছরের অক্টোবরেই পূর্ব কঙ্গোর কিভু হ্রদে নৌকাডুবিতে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে কিভু হ্রদের আরেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান প্রায় ১০০ জন।