ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জন প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দূর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
এসব সুপারিশের মধ্যে গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সকল গণমাধ্যমকর্মীর জন্য মজুরি বোর্ড গঠন এবং বর্তমান অর্থনীতিতে জীবনযাপনের ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং নারী-পুরুষের সমকাজে সমমজুরী নিশ্চিত করা।'
এ বিষয়ে সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমকর্মী আইন ২০২২ এর খসড়া সংস্কার করে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, যা সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণ করে সব ধরনের গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ করা।’
পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যমূলক আচরণ, নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ের জন্য একটি অভিযোগ ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করা।গণমাধ্যমের প্রত্যেক শাখা ও স্তরে ৫০% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।’
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩ টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে ৯টি সভায় মিলিত হয়। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।