উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

বাসস
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৬ আপডেট: : ২১ আগস্ট ২০২৫, ২১:৩৯
ছবি : বাসস

মহসিন বেপারী

ঢাকা, ২১ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি আঘাত হানে। এগুলোর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধসের মাত্রা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।

কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করে ফসল উৎপাদন করছে। স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উপকূলে বসবাসকারী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পরিবর্তশীল উপকূলরেখা। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজান এবং বৃষ্টিপাতের পানি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নদ-নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। উপরন্তু শীতকালে পানির স্রোত কম থাকায় সামুদ্রিক লোনাপানি উজানে প্রবেশ করছে। যার ফলে চাষাবাদ নিয়ে সংকট মোকাবিলা করছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ।

বাংলাদেশে ৭১১ কিলোমিটার উপকূলীয় সমুদ্র তটরেখা রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবন উপকূল ঘিরে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার। সমুদ্র উপকূল বরাবর রয়েছে গঙ্গা ও মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত প্রশস্ত জোয়ারভাটা সমভূমি এবং অসংখ্য নদী মোহনার ব-দ্বীপ। নদী সঙ্গমের ব-দ্বীপগুলো ও সমুদ্রে তটরেখা বরাবর ভূখণ্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের অবকাঠামো বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়েছে। ফলে অবাধে লোনাপানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতাকে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নদী, কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সবদিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। আর দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে উপকূলীয় অঞ্চল। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে নদীটি প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। 

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বাসসকে বলেন, বর্ষাকালে সামগ্রিকভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং শুষ্ক মৌসুমে অতিরিক্ত খরা দেখা যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত না থাকলেও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসলের খুব ক্ষতি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ঘন ঘন বৃষ্টিপাত কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকরা শুধু ফসলের ধরন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়নি বরং ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। 

আবহাওয়াবিদরা বাসসকে জানিয়েছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশনির্ভর উপজীবিকারা তাদের জীবিকা হারিয়ে ঝুঁকিতে আছে। মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্বাদু পানির জেলে, সমুদ্রগামী জেলে এবং মোহনাগামী জেলে তাদের জীবিকার উৎস হারাচ্ছে। 

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দা ইসরাত নাজিয়া বাসসকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। আগে ১০ কিংবা ১৫ বছর পরপর বড় ধরনের কোনো হলেও বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা প্রত্যেক বছরে হানা দিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য উপকূলবাসীর প্রস্তুত থাকতে হয়। সবকিছু মিলে জলবায়ুজনিত বিপর্যয় এবং নদীভাঙন-ভরাটসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমির ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে উপকূলের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর জীবিকা দুর্ভোগের মুখে পড়ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডাকসু প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন
যৌথ বাহিনী এক সপ্তাহের অভিযানে সারাদেশে আটক ৫৬
রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ৬৫ জন গ্রেফতার
চট্টগ্রামে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল: ফাওজুল কবির খান
এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চার নির্দেশনা    
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থার গতিশীলতা দরকার : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব
সিলেটে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান, ৩ জনের কারাদণ্ড
জিলানীর শরীরে থেকে যাওয়া পিলেট অপসারণ করলেন রফিকুল ইসলাম
ব্রিটেনে আশ্রয় চেয়ে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে
১০