দিনমজুর থেকে ফল ব্যবসায়ী : সততা আর শ্রম দিয়ে মোখলেছ আজ স্বাবলম্বী

বাসস
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৫
ছবি : বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : শূন্য থেকে শুরু। অভাবের সংসারে বেশি পড়ালেখা করতে পারেন নি। বড় সন্তান হিসেবে পরিবারের দায় কাঁধে নিতে প্রথমে বেছে নেন দিনমজুরি। কিন্তু তাতে কোনো আশা দেখতে পাচ্ছিলেন না মোখলেছ। ধারের টাকায় শুরু করেন ফলের ব্যবসা। আজ তিনি স্বাবলম্বী। পরিশ্রম ও সততা তাকে আজ এখানে পৌঁছে দিয়েছে। 

বর্তমানে মোখলেছের দোকান পরিচালনার খরচ বাদ দিয়ে তার বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি। তার দোকানে আরও ৫ জন স্থানীয় বেকার যুবক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

লালমনিরহাট জেলা সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের আফরুক গ্রামের মৃত একরামুল হক ও মোকলেজা বেগমের পুত্র মোখলেছুর রহমান মোখলেছ (৩৬)। দুই ভাই-বোনের মধ্যে মোখলেছ বড়ো। বাবা ছিলেন নিম্নবিত্ত কৃষক। মা গৃহিণী। অর্থনৈতিক অনটনের কারণে নবম শ্রেণির বেশি পড়া হয়নি তার। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
বাসসের সাথে আলাপকালে মোখলেছ বলেন, ‘ প্রথমে অন্যের দোকানে কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতাম। সেই টাকায় সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। পরিবারের কাউকে ভালোভাবে খাওয়াতে বা পড়াতে পারতাম না।”

তিনি জানান, সততা বজায় রেখে কীভাবে সফলতা অর্জন করা যায়, সেই চিন্তা সবসময় তাড়িয়ে বেড়াতো।  ২০১৭ সালে বাবার ছোট একটি জমি বন্ধক রেখে বড়বাড়ী বাজারে একটি দোকানের জামানত  দেন। পরে প্রতিবেশী বড় ভাই বেলায়েত হোসেনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে।

মোখলেছ অভাবের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘পরিশ্রম, ধৈর্য আর একাগ্রতার ফলেই আজকের অবস্থানে  পৌঁছেছি। আমার উপার্জনের টাকায় ছোট বোনের বিয়েতে বাবাকে সাহায্য করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে ফল ব্যবসার পাশাপাশি সুপারি বাগান ও ফসলি জমি বন্ধক নিয়ে চাষ করি। গৃহপালিত পশুও আছে। কিছু  নগদ টাকাও জমিয়েছি।’

মা, স্ত্রী ও পুত্র নিয়ে মোখলেছের এখন চারজন সদস্যের পরিবার। স্ত্রী আরজিনা বেগম (২৯) একজন গৃহিণী। তিনি ঘর সামলানোর পাশাপাশি ছেলের পড়ালেখায় সহায়তা করেন। তাদের একমাত্র পুত্র মুস্তাকিম আহমেদ মিশু বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মোখলেছ বলেন, ‘আমার ছেলেটা পড়ালেখায় ভাল। যত কষ্টই হোক, আমার ছেলেকে ডাক্তার বানাবো। ছোটবেলা থেকেই এই ইচ্ছা আমার। নিজে পারিনি। কিন্তু আমার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর চেষ্টা করব।’

ফলের ব্যবসাকেও আরো বড় করার পরিকল্পনা রয়েছে মোখলেছের। তিনি খুচরা ফল বিক্রির পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে চান। তিনি বলেন, ‘সরকার যদি সাহায্য করে, তাহলে আমি ব্যবসা আরও বড় করব। দোকানের পাশে অব্যবহৃত জায়গায় পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে চাই। এতে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।’

ফল কিনতে আসা স্থানীয় লেমন বাবু (৩২) ও মমিনুল ইসলাম (৩৬) বলেন, ‘ছোট হলেও ওর দোকানে দেশি-বিদেশি মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। আমরা সবসময় এখান থেকেই ফল কিনি। আপেল, কমলা, কলা, আঙুর, বেদানা, পেঁপে ও তরমুজসহ সবই পাওয়া  যায়।”

বড়বাড়ী বাজার বণিক সমিতির সেক্রেটারি তৌফিকুল ইসলাম তপু বাসসকে বলেন, ‘মোখলেছ খুব পরিশ্রমী এবং সততার সঙ্গে ব্যবসা করে। তার দোকানে সবসময় টাটকা ফল পাওয়া যায়। বাজারের অধিকাংশ ক্রেতা তার দোকান থেকেই ফল কেনে।’ 

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, ‘মোখলেছের সফলতার গল্প অনুপ্রেরণামূলক। যদি তিনি আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদন করেন, আমরা তদন্ত করে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করব।’
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘বর্তমান সরকার তরুণ উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা যদি পরিকল্পনাগুলি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে, তা বাস্তবায়নে সহায়তা করা হবে।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে মোখলেছ বলেন, চাকরির পেছনে না ঘুরে অল্প পুঁজি নিয়ে ফলের ব্যবসা শুরু করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। আমাদের দেশে সারা বছরই ফলের চাহিদা থাকে। ৪০-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিমাসে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। প্রশিক্ষণের প্রয়োজন না হলেও, অভিজ্ঞ কারো সাথে থেকে শিখলে ব্যবসা করা সহজ হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দোহারের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রুনু ও সেন্টু গ্রেফতার  
উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ
আগস্টের ২০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৭.৪ শতাংশ বৃদ্ধি 
পিপিআর সংশোধনের জন্য বিপিপিএ মাঠ পর্যায়ে কর্মশালা 
ইইউতে ভেটো প্রত্যাহারে হাঙ্গেরিকে চাপ দিতে ট্রাম্পকে জেলেনস্কির অনুরোধ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলার : বাংলাদেশ ব্যাংক
চট্টগ্রামে ট্রাকচাপায় বৃদ্ধের মৃত্যু
মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল : ধর্ম উপদেষ্টা
‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ করতে ডিসিদের প্রতি তথ্য উপদেষ্টার আহ্বান
সিলেটে দরপত্রদাতাদের সঙ্গে পিপিআর সংশোধন নিয়ে আলোচনা বিপিপিএ’র
১০