কুমিল্লা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ (বাসস) : জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হলেও সংরক্ষণ ও ন্যায্য মূল্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষরা। উৎপাদিত আলু নিয়ে এখন চিন্তিত তারা।
স্থানীয় কোল্ডস্টোরেজগুলোতেও জায়গা না পাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে এবং গাছতলায় কোন রকম ত্রিপল টানিয়ে সংরক্ষণ করছেন। অনেকের আলুতে পচন ধরেছে। দাম বাড়ার আশায় দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষার পরও সেই আলু দাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক কৃষক।
সরেজমিনে জেলার বুড়িচংয়ের মিথলমা, আবিদপুর, মনঘাটা, শিকারপুর, পাঁচকিত্তা, হালাগাও, লোয়ার চর, কাকিয়ার চর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে খোলা জায়গায়, গাছতলায়, বাড়ির উঠোন ও ঘরের ভেতর আলুর স্তুপ দেওয়া হয়েছে। অনেকেই আবার জমিতেই স্তুপ করে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন আলু। কেউ আবার ত্রিপল খুলে বেছে বেছে পচা ও পোকায় খাওয়া আলু ফেলে দিচ্ছেন।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিমণ আলু উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েয়ে ৭৫০-৮০০ টাকা। অথচ বাজারে একমণ আলু পাইকারী বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। যার কারনে বাধ্য হয়ে দেশীয় কায়দায় তারা আলু সংরক্ষণ করেছেন। তবে বৃষ্টি হলে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার কারনে আলু পচে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন আলু।
কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীজ, হাল চাষ, সার, ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ সব মিলিয়ে প্রতিমণ আলু উৎপাদন করতে প্রায় ৭৫০ টাকা খরচ হযেছে। অথচ এখন বাজারে আলু বিক্রি করতে চাইলে পাইকাররা বলছে এক মণের দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। যার কারনে আলু বিক্রি করতে পারছিনা আমরা। আমার বাড়ির উঠানে ৫০০ মণ আলু ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রেখেছি। আপনি গ্রাম ঘুরে দেখেন অনেকেই আমর মতো ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির উঠোনে আলু জমা করে রেখেছে। যদি একটু দাম বাড়ে তাহলেই ছেড়ে দিব। আর যদি এর মধ্যে বৃষ্টি-বাদল শুরু হয় তাহলে সব শেষ।
সুমন মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করছি। অথচ বাজারে খুচরা আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা। আমরা আলু উৎপাদন করে কি দোষ করে ফেলেছি?। মৌসুম শেষে মজুদ কমে আসলে ১৩ টাকার আলুই বিক্রি হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। আমরা যদি নিজেরা এ আলু সংরক্ষণ করতে পারতাম তাহলে মজুতদারদের পরিবর্তে লাভবান আমরাই হতাম।
আলু চাষী মোকালেব মিয়া বলেন, শখের বসে এ বছর ৪২ শতক জমিতে আলু লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে আমার কাছে প্রায় ৬০ মণ আলু রয়েছে। অন্যান বছর দেখি পাইকাররা বাড়িতে এসে আলু নিয়ে যায় কিন্তু এবার কেউই আসছে না। শুনেছি নিমসার বাজারে উত্তরবঙ্গ থেকে আনা আলু বেশি বিক্রি হচ্ছে। গ্রাম থেকে আলু সংগ্রহ করতে হলে শ্রমিক খরচ এবং পরিবহন করো দুটোই লাগে তাই তারা এদিকে আগ্রহ দেখায় না।
কৃষকদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা আলু পরিবহন খরচসহ অন্যান্য খরচে দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যায়। যারা ট্রাকে করে আলু পাঠান সে আলুর সংরক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই থাকে। বিক্রি না হলে পচে যাওয়ার ক্ষতির দায় না থাকায় আড়তদাররা বাইরে থেকে আসা আলু ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন বেশি। অন্যদিকে যারা আলু বেসরকারিভাবে মজুদ করেন তাদের আলু দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে স্থানীয় কল্ডেস্টোরেজ গুলো। একদিকে আড়তদারদের কাছে চাহিদা নেই স্থানীয় আলুর অপরদিকে কোল্ড স্টোরেজে নেই জায়গা - মাঝখানে বিপুল পরিমাণ আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
নিমসার বাজারের আলুর আড়তদার মো. নাজিম বলেন, সারা বাংলাদেশের কোল্ড স্টোরেজদের সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে। জানা মতে কোথায়ও জায়গা নেই। তারপরও সরকার যদি খোঁজ নিয়ে কোল্ড স্টোরেজ গুলোতে জায়গা করতে পারে তাহলে আমাদের স্থানীয় আলুগুলো রাখার ব্যবস্থা করলে কৃষক বেঁচে যাবে। এ বিপুল পরিমাণ আলু পচনের হাত থেকে বাঁচানো গেলে আলুর দাম মানুষের নাগালের মধ্যে সারা বছরই থাকবে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, এবছর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১০ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমি। উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬১ একর জমিতে। ফলন হয়েছে ২২ লাখ ৯০ হাজার ৭৮ টন, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। আমরা ২০২৪ সালের বন্যার পর চেষ্টা করেছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে আলু চাষ করতে হয়। যেসব জমিতে আলু চাষ হয়েছে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কিন্তু যে পরিমান আলু এখনো বিক্রি হয়নি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।