ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): প্রথমে দেখতে মনে হবে, সাধারণ একটি বিশাল বুলডোজার, যা ইসরাইলের কেন্দ্রীয় একটি পরীক্ষামূলক স্থানে মাটি খনন করছে। কিন্তু যখন সেটি আরও কাছে আসে, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়—চালকের কেবিনটি পুরোপুরি খালি।
এটি হলো 'রোবডোজার', একটি সুরক্ষিত প্রকৌশল যন্ত্র যা দূর থেকে পরিচালিত হয়, এবং এই ক্ষেত্রে এটি পরিচালিত হচ্ছে আমেরিকার আলাবামায় একটি সামরিক প্রদর্শনী থেকে।
সামরিক প্রকৌশলী এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাটারপিলারের ডি৯ বুলডোজারের রোবোটিক সংস্করণ 'রোবডোজার' হল ভবিষ্যতের স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ যন্ত্র।
তেলআবিব থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইল সেনাবাহিনী ডি৯ ব্যবহার করে আসছে অনেক বছর ধরে, রাস্তা তৈরি, ধ্বংসাবশেষ সরানো এবং ভূমি সমতল করার মতো ফ্রন্টলাইন কাজগুলোতে।
তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, এবং এর পরে লেবাননেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর, ইসরাইল সেনাবাহিনী এই রোবোটিক সংস্করণটি আরও বেশি করে ব্যবহার করতে শুরু করেছে, তাদের যুদ্ধ কার্যক্রম বাড়ানোর এবং সেনাদের ঝুঁকি কমানোর জন্য।
'আমাদের মূল লক্ষ্য হলো বুলডোজারের ককপিট থেকে মানুষকে সরিয়ে দেওয়া,' বলেন ইসরাইল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের 'রোবডোজার' প্রকল্পের উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী রনি।
গাজা যুদ্ধে সেনাবাহিনী ক্রমশ চালকবিহীন এই সংস্করণটি ব্যবহার করছে, যা 'মানবচালিত যন্ত্রের তুলনায় আরো ভালোভাবে' সব কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম, বলেন রনি। নিরাপত্তার কারণে তিনি শুধু তার নামের প্রথম অংশটি প্রকাশ করেছেন।
যদিও বর্তমানে এই রোবডোজার ও অন্যান্য প্রযুক্তি মানুষের দ্বারা পরিচালিত, ভবিষ্যতে এটি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় হতে পারে, যা যুদ্ধের ভবিষ্যত নিয়ে নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন তুলতে পারে। এই প্রযুক্তি গাজা যুদ্ধে 'ইসরাইল' সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নতুন দিক নির্দেশ করছে।
‘প্যারাডাইম শিফট'
ইসরাইলের যুদ্ধক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রবণতা—যেমন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গোয়েন্দা সরঞ্জাম—প্রতিবেদন এবং সমালোচনার মাধ্যমে সামনে এসেছে। তবে, এটি সঠিকতার অভাব, মানবিক নজরদারির অভাব এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সম্ভাবনা নিয়ে সমালোচিতও হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, 'রোবডোজার'-এর ব্যবহার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের স্বয়ংক্রিয়করণ বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে, যেমন দূরনিয়ন্ত্রিত সাঁজোয়া যান, যা ড্রোনের মতোই কাজ করে।
একজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, এএফপিকে বলেন, 'আমরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রোবোটিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আসছি, তবে সেগুলি ছিল খুবই সীমিত। এখন তা বড় পরিসরে ব্যবহার করা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, সেনারা এখন শত্রু ভূখণ্ডে প্রবেশ না করেই যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে পারছে।
লন্ডনভিত্তিক হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর অ্যান্ড্রু ফক্স বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সম্ভবত প্রথম যেটি সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে দূরনিয়ন্ত্রিত রণযন্ত্র ব্যবহার করছে।
'এটি একটি বড় অগ্রগতি,' বলেন তিনি, 'এটি যুদ্ধের ধারণাই পাল্টে দিচ্ছে—একই কাজ হচ্ছে, কিন্তু অনেক কম ঝুঁকির সাথে।'
নতুন যুগের সূচনা
'এটাই ভবিষ্যৎ,' বলেন জন স্পেন্সার, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট পয়েন্টের মডার্ন ওয়ার ইনস্টিটিউটের শহরভিত্তিক যুদ্ধ বিষয়ে অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান।
তিনি বলেন, 'অনেকে এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, কিন্তু কেউই এর সরাসরি ব্যবহার দেখতে পায়নি।'
তবে, এ ধরনের উন্নত প্রযুক্তির নৈতিক ও আইনি বিরোধিতা ছাড়াও, বিশেষ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে মানুষের উপস্থিতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।