ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগ্রামের বাইসরান উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিদেশি নাগরিকসহ অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সৌদি আরবের জেদ্দা সফর সংক্ষিপ্ত করে ভারতে ফিরেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বুধবার এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটির সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছেন বলেও জানা গেছে ।
এনডিটিভির উদ্ধৃতি ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘এএনআই’ এই খবর জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লিতে ফিরে এসেছেন।
এর আগে সৌদি আরবে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ পরিহার করে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মোদি।
মূলত বুধবার রাতে তার ফেরার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার পাহলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর বুধবার সকালে তিনি ভারতে পৌঁছেছেন। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান হামলার নিন্দা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং সৌদি প্রিন্স সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
এর আগে জেদ্দায় থাকা অবস্থায় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।’
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সৌদি রাজপ্রাসাদে গিয়ে সৌদি নেতৃত্বকে মোদির সফর সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ জানান।
সৌদি আরবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুহেল আজাজ খান বলেন, ‘কাশ্মিরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সৌদি যুবরাজ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ভারত ও সৌদি আরব একসাথে কাজ করছে।’
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন বলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ট্রাম্প লেখেন: ‘কাশ্মির থেকে আসা খবরে আমরা শোকাহত। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা প্রার্থনা করছি।'
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা হয়। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত মনোরম শহর পেহেলগামকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
জনপ্রিয় এই পর্যটন নগরীর এই হামলা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
এদিকে সৌদি থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদি কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালেই ভারতে নামলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন তিনি। সেই বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার রাতে সৌদির রাজার নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়েই নয়াদিল্লির বিমান ধরেন মোদি। মধ্যরাতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সামাজিকমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘সৌদি আরব সফর শেষ করে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
মোদির সফরসূচি অনুযায়ী জানা যায়, বুধবার রাতে তার দিল্লি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলার ঘটনার পরই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি। খবর পাওয়ামাত্রই সৌদি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ফোন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
পাশাপাশি কাশ্মীরের সুরক্ষাব্যবস্থা তত্ত্বাবধানের নির্দেশ দেন। শুধু তা-ই নয়, শাহকে কাশ্মীরে পৌঁছানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই শ্রীনগরে পৌঁছে সেনা, আধাসেনা, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শাহ।
মঙ্গলবার সকালেই দু’দিনের সফরে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন মোদি। সৌদির যুবরাজ সালমানের আমন্ত্রণেই এই সফরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই ভারতে ফেরার তোড়জোড় শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরআগে সৌদি থেকেই তিনি এক্সে লেখেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা। প্রার্থনা করি, আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। সব রকমের সাহায্য করা হবে।’
তার পরেই প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এই জঘন্য অপরাধের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য কখনও পূরণ হবে না।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরও জোরদার হবে।’
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগ্রামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হন।
এই হামলা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় হামলা। নিহতদের মধ্যে দু’জন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন বলে জানা গেছে।