ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে এই সপ্তাহে শোক ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মঙ্গোলিয়ার অতি ক্ষুদ্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়। তারা মনে করছে, বিশ্বের অন্যতম দূরবর্তী এই বিশ্বাসী গোষ্ঠীর জন্য পোপের সাম্প্রতিক সফর ছিল ইতিহাস-সৃষ্টকারী ও অন্তরঙ্গ অন্তর্ভুক্তির এক অনন্য বার্তা।
উলানবাটুর থেকে এএফপি জানায়, আর্জেন্টিনার এই আধ্যাত্মিক নেতা চলতি বছরের ইস্টার সোমবার ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ছিলেন পূর্ব এশিয়ার এই বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পদার্পণকারী প্রথম পোপ।
'তিনি ছিলেন এক নম্র, সৌম্য ও শান্ত মানুষ,' বলেন ৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিলেগমা সুখবাতার, যিনি পোপের সফরকালে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, 'যখন আমি তাঁর হাত ধরেছিলাম, তখন আমি এক মহৎ চারিত্রিক অনুভব পেয়েছিলাম।'
'তাঁকে হারানো আমাদের জন্য বিপর্যয়কর—এ যেন রক্তের কেউ, আত্মীয়স্বজনকে হারানো।'
পোপের চার দিনের সফরের মূল লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় সংলাপ, মিশনারি তৎপরতা এবং মাত্র ১,৪০০-এর কিছু বেশি সদস্যবিশিষ্ট এই ক্ষুদ্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করা।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানী উলানবাটুরের সেন্ট পিটার ও পল ক্যাথেড্রালে অনুষ্ঠিত হয় প্রয়াত পোপের উদ্দেশ্যে রেকুইয়েম মাস। সেখানে একটি আচারিক টেবিল, মোমবাতি ও লিলি ফুল দিয়ে ঘেরা ফ্রেমে বাধানো পোপের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয় শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে।
উপাসনা পরিচালনা করেন উলানবাটুরের অ্যাপোস্টলিক প্রিফেক্ট, কার্ডিনাল জর্জিও মারেঙ্গো।
'মঙ্গোলিয়ার আমাদের ক্ষুদ্র এই সম্প্রদায়ের জন্য এ সফর ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ,' এএফপিকে বলেন কার্ডিনাল মারেঙ্গো।
'সেন্ট পিটারের উত্তরসূরির এই মনোযোগের অর্থ—এখানে বহু মিশনারি ও মঙ্গোলিয়ান বিশ্বাসীদের আত্মত্যাগ ও জীবন কর্ম ক্যাথলিক চার্চের প্রধানের স্বীকৃতি পেয়েছে।'
‘সংখ্যার ব্যাপার নয়’
২০২২ সালে মারেঙ্গোকে কার্ডিনাল হিসেবে নিয়োগ ও পরবর্তী বছর মঙ্গোলিয়া সফরের সিদ্ধান্ত—পোপের বহুদিনের ‘প্রান্তজন’ কেন্দ্রিক ভাবনারই প্রতিফলন বলে মনে করা হয়।
'আসুন, আমরা তাঁর প্রেরণাদায়ক বাণীগুলো মনে রাখি,' বলেন মারেঙ্গো। 'আমি বিশ্বাস করি আমাদের সম্প্রদায়ের বিশ্বাসীরা তাঁর উত্তরাধিকার বহন করতে প্রস্তুত থাকবে।'
পোপের সফরের সময় তিনি উলানবাতারের স্টেপ অ্যারেনায় এক মহামিসা উদযাপন করেন, প্রধান বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেন এবং ধর্মগুলোর মধ্যে সম্প্রীতির আহ্বান জানান।
তিনি তাঁর ধর্মোপদেশে মঙ্গোলিয়ান ক্যাথলিকদের উদ্দেশে বলেন, 'মানুষের কাছে থাকো, দূরে নয়'—এ বাক্য এখনও স্থানীয় গির্জাগুলোতে উদ্ধৃত হয়।
৭০ বছর বয়সী মিশনারি সিস্টার সালভিয়া, যিনি ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গোলিয়ায় কাজ করছেন, বলেন, 'পবিত্র পিতার কাছে প্রত্যেক মানুষই গুরুত্বপূর্ণ। এই ছোট্ট সম্প্রদায়ে এসে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন—এটা সংখ্যার প্রশ্ন নয়।'
৩৬ বছর বয়সী ইলেকট্রনিকস টেকনিশিয়ান এনখজারগাল এনখতসেতসেগ বলেন, 'কারণ তাঁর সফর খুব বেশি আগের ঘটনা নয়, মঙ্গোলিয়ান বিশ্বাসীরা তাঁকে খুব কাছের একজন বলে অনুভব করতেন। এ খবরে অনেকেই ধাক্কা খেয়েছেন।'
‘সর্বোচ্চ গুরুত্বের একজন’
পোপের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে শুধু ক্যাথলিকরাই নয়, অন্যান্য মঙ্গোলিয়ানরাও।
প্রধানমন্ত্রী লুভসান্নামস্রেইন ওইউন-এর্ডেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, 'এই মহৎ মানুষটির মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি, যিনি নিজেকে নম্রভাবে ‘আশার তীর্থযাত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।'
'পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন মঙ্গোলিয়ান জনগণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় সফরকারী প্রথম পোপ,' তিনি যোগ করেন।
মঙ্গোলিয়ার প্রধান বৌদ্ধ কেন্দ্র গান্দান্তেগচিনলেন মঠ থেকেও জানানো হয় ‘গভীর শোক’, যেখানে বলা হয়, পোপ ফ্রান্সিস ‘মানবতার ঐক্য, সহানুভূতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ক্যাথেড্রালে তখন এক নিবিড় ও শ্রদ্ধাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল, মানুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে নীরবে প্রার্থনা করছিল।
'আমরা এমন একজনকে হারিয়েছি, যিনি ছিলেন সর্বোচ্চ গুরুত্বের,' বলেন ২৫ বছর বয়সী অফিস সহকারী নারমানদাখ পুরেভসুরেন।
'তবে পবিত্র পিতা আমাদের জন্য আরেকজন মহান পালক পাঠাবেন।
'যেমন পোপ ফ্রান্সিস সবসময় বলতেন, আসুন আমরা সৎ বিশ্বাসী হই এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা ভাগ করে নিই।'