ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন গাজার লাখো বাসিন্দা। দখলদার ইসরাইল ১০ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। খাবার ও ওষুধের পাশাপাশি সেখানকার বাসিন্দারা খাবার না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এমনই ইসমাইল নামের একজন যে ক্যাম্পে থাকে সেখানে খাবার বা পানি পৌঁছায় না বলে কেঁদে ফেলে।
শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে গাজাবাসীর করুণ চিত্র তুলে ধরেছে।
ছয় বছর বয়সী গাজার শিশু ইসমাইল আবু ওদেহ উত্তর গাজার একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ভিড়ের মধ্যে বাটি হাতে চিৎকার করে বলছিল, ‘আমাকে কিছু দাও।’ তার বাটিতে কিছু ডাল দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু সে যখন ফিরছিল, ভিড়ের মধ্যে খাবারগুলো তার হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়। সে কাঁদতে কাঁদতে তার পরিবারের তাঁবুতে ফিরে যায়।
পরে কিছু খাবার আনতে সক্ষম এক মুরব্বি ইসমাইলের সঙ্গে কিছু খাবার ভাগ করে নিলেন। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পরদিন আর কোনো খাবার বা পানি পৌঁছায়নি ইসমাইলের ক্যাম্পে। একটি স্কুল ভবনে গড়া শরণার্থী শিবিরে থাকে সে। সেখানে জড়ো হওয়া লোকদের কাছে খালি বোতল এবং বাটি ছিল। ইসমাইল সেদিনও আবার কাঁদল।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ এবং অন্যান্য সাহায্যের ওপর ১০ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অবরোধ অব্যাহত রাখার মধ্যে গত দুই দিন ধরে গাজার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে ‘গার্ডিয়ান’ কথা বলেছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। যদিও ইসরাইলি সরকার জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় খাদ্যের ‘কোনো অভাব নেই’ বরং ‘আসল সঙ্কট হলো হামাস ত্রাণ লুট করছে এবং বিক্রি করছে। তবে গাজার বাসিন্দারা বলছে ভিন্ন কথা।
গার্ডিয়ানের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফোনে তারা জানান, দিনে এক বেলা খাবার জোটানোও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বহু রান্নাঘর বন্ধ হয়ে গেছে। বাজারে যা আছে, তার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
গাজার এক স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, আমার রান্নাঘর ১০ দিন আগে বন্ধ হয়ে গেছে। এই অসহায়ত্বকে ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। উত্তর গাজার বসবাসকারী ২৩ বছর বয়সী এক নারী বলেন, ‘খাবার ও ওষুধের অভাবে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি বাড়ছে’।
৩১ বছর বয়সী আদহাম আল-বাতরাউই আগে প্রসিদ্ধ শহর আল-জাহরায় থাকতেন। তিনি এখন মধ্য গাজায় বাস্তুচ্যুত। তিনি বলেছেন, ক্ষুধা ‘দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে কঠিন অংশগুলোর মধ্যে একটি’।
তিনি আরো বলেছেন, মানুষকে ‘বেঁচে থাকার জন্য সৃজনশীল হতে হয়’। তিনি পাস্তা সিদ্ধ করে তা মাখিয়ে রুটি মতো কিছু তৈরি করেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমনভাবে খাওয়ার কৌশল আবিষ্কার করছি, যা আগে কল্পনাও করিনি।’
তিনি আরো বলেছেন, সম্প্রতি যে একবেলা খাবার খাচ্ছি তা ‘আমাদের দিন কাটানোর জন্য যথেষ্ট, কিন্তু আমাদের শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়’।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরের নার্স রেওয়া মোহসেন জানান, তার তিন ও দেড় বছর বয়সী দুই ছোট মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, এই বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতির সময় তিনি ন্যাপকিন মজুদ করেছিলেন কিন্তু এক মাসের মধ্যে এগুলো শেষ হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার হোয়াটসঅ্যাপে তিনি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তার মেয়েরা অ্যাপার্টমেন্টে বোমা হামলার শব্দে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ‘মাঝে মাঝে আমি তাদের চেয়ে বেশি ভয় পাই’।
শুক্রবার এক বোমা হামলায় তাদের ভবনের দরজা-জানালা উড়ে যায়। তিনি বলেছেন, আল্লাহর শোকর, আমি আর আমার মেয়েরা বেঁচে আছি। কিন্তু এখন যাব কোথায়?
ইসরাইলি হামলায় ইউরোপিয়ান হাসপাতাল আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় নার্স রান্ডা সাঈদ বলেছেন, এটা ছিল এক নিখাদ আতঙ্কের মুহূর্ত। হাসপাতালটি এখন আর চালু নেই।
রোগীদের স্থানান্তর করা হয়েছে নাসের হাসপাতালে, যেখানে ওষুধ, ব্যান্ডেজ এমনকি ব্যথানাশক পর্যন্ত কমে এসেছে।
তিনি বলেছেন, এখানকার রোগীরা আমাদের মা, ছেলে, মেয়ে এবং ভাইবোনের মতো। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের কর্তব্য শেষ হওয়া উচিত নয়।