ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এলিয়াস রদ্রিগেজের (৩১) বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইহুদিবিদ্বেষ ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
আদালতে প্রসিকিউশের দেওয়া নথি অনুযায়ী, গত বুধবার রাতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল জিউইশ জাদুঘরের বাইরে এলিয়াস তাদের গুলি করে হত্যা করে। গুলি চালানোর পর পুলিশের হাতে গ্রেফতারকালে রদ্রিগেজ চিৎকার করে বলছিল, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন।’ প্যালেস্টাইন’। পরে পুলিশকে সে জানায়, ‘আমি এটা করেছি প্যালেস্টাইনের জন্য, গাজার জন্য।’
পরদিন বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত চিকাগো শহরের বাসিন্দা এলিয়াসকে প্রাথমিক শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যা বা প্রথম ডিগ্রি হত্যার দুটি হত্যা মামলা এবং বিদেশি কর্মকর্তাদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
কলম্বিয়া জেলার অন্তর্বর্তীকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি জিনাইন পিরো সাংবাদিকদের বলেন, কর্তৃপক্ষ এই গুলিবর্ষণকে ‘সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাস ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে’ তদন্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, আগামীতে আরো অভিযোগ যোগ হতে পারে।’ পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৮ জুন ধার্য করা হয়েছে।
এই গুলিবর্ষণের ঘটনা পর বিশ্বজুড়ে নিন্দা শুরু হয় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার ইউরোপের ইসরাইয়েল বিরোধী সমালোচনাকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে উসকানিতে ইউরোপের অনেক দেশের নেতাই এমন জড়িত।
এদিকে, ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন তেল আবিবের এমন অভিযোগকে ‘একেবারেই অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও একই অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি ইহুদি বিদ্বেষের ভয়াবহ মূল্য।’ ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে বেপরোয়া উসকানিই এর পেছনে কাজ করেছে’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
হামলার পরপরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। পরে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘এই হামলা নিঃসন্দেহে ইহুদি বিদ্বেষপ্রসূত।’
ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামটি হোয়াইট হাউজ থেকে এক মাইল দূরে অবস্থিত, যেখানে আমেরিকান জিউইশ কমিটি আয়োজিত একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের পরই ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
ইসরাইল নিহতদের পরিচয় জানিয়েছে। তারা হলেন ইয়ারন লিসচিনস্কি (ইসরাইলি নাগরিক) এবং সারা লিন মিলগ্রিম (মার্কিন নাগরিক), যিনি ইসরাইলি দূতাবাসে কাজ করতেন। তারা বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন।
নিহত লিসচিনস্কি ইসরাইলি দূতাবাসের গবেষক ছিলেন এবং মিলগ্রিম দূতাবাসের জনসংযোগ বিভাগে কাজ করতেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বহু মানুষ মিউজিয়ামের সামনে জড়ো হয়ে প্রার্থনা ও সংগীত পরিবেশন করেন।
শোক প্রকাশ করে গিল লিভনি বলেন, ‘অবশ্যই যুদ্ধ ভয়াবহ’, তবে ইহুদিবিদ্বেষ তো নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে... যাদের বন্ধু ভাবতাম, তারাও এখন ইহুদিবিদ্বেষী হয়ে উঠছে।’
নিউ জিউইশ ন্যারেটিভের প্রধান হাদার সাসকিন্ড বলেন, ‘এই মুহূর্তটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক, এটাতো কোনো সমাধান হতে পারে না।’
পুলিশ জানায়, ঘটনার রাত ৯টার দিকে ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে রদ্রিগেজকে পায়চারী করতে দেখা যায়। অভিযোপত্রে বলা হয়েছে, তিনি পেছন থেকে এসে দুই ভুক্তভোগীর ওপর ২১টি গুলি চালায়। ফলে তারা মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু তারপরও রদ্রিগেজ গুলি চালাতে থাকেন। মিলগ্রিম উঠে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আবারও গুলি করেন ঘাতক রদ্রিগেজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে নিরাপত্তা কর্মীরা রদ্রিগেজকে আহত ব্যক্তি ভেবে মিউজিয়ামের ভেতরে ঢুকতে দেন এবং তাকে সাহায্য করতে যান।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে ইহুদিবিদ্বেষ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই এ তেল আবিবের এ অভিযান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীরা অভিযানে বেসামরিক মানুষের বিপুল প্রাণহানির তীব্র নিন্দা করছেন।
যদিও নেতানিয়াহু ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সমালোচনা করে বলেন, ‘এরা হামাসের মতো গণহত্যাকারী বাহিনীকে টিকিয়ে রাখতে চাইছে, যাতে তারা আবারও ৭ অক্টোবরের মতো হামলা চালাতে পারে।’