নেতানিয়াহুর জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে গাজায় ইসরাইলের হামলা 

বাসস
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১২:৪৫

ঢাকা, ২৭ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সোমবার ‘জীবিত অথবা মৃত’ সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ, গাজায় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় হামাস সম্মত হওয়ার মধ্যে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য করেছেন। যেখানে ১০ জন ইসরাইলি জিম্মি এবং আরো ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি ছাড়াও ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি কথা ছিল। 

গাজা সিটি থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

ইসরাইল সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজা উপত্যকায় আক্রমণাত্মক অভিযান জোরদার করেছে। মাসব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধের ফলে তীব্র খাদ্য ও চিকিৎসা ঘাটতি দেখা দেওয়ায় ইসরাইল আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে পড়ে সীমিত পরিসরে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয় নেতানিয়াহুর প্রশাসন। কিন্তু তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা যদি আজ এটি অর্জন না করি, তাহলে আগামীকাল আমরা এটি অর্জন করব এবং যদি আগামীকাল না হয়, তাহলে পরশু। কিন্তু আমরা হাল ছাড়ছি না'।

তিনি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘আমরা জীবিত এবং মৃত সকলকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর আক্রমণের সময় হামাসের যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর ফলে যুদ্ধ শুরু হয়। আটক জিম্মিদের মধ্যে ৫৭ জন গাজায় রয়ে গেছে। এরমধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে। 

হামাস সোমবার জানিয়েছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের  উপস্থাপিত মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু উইটকফের একজন মুখপাত্র পরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধাদের গ্রহণের কথা অস্বীকার করেছেন।

মার্কিন দূত মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, ‘হামাসের কাছ থেকে আমি যা দেখেছি তা হতাশাজনক এবং সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সোমবার বলেছেন, গাজায় ভোরে ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে ইসরাইলি হামলায়, ‘কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে।’ সেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মধ্যে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় হামাস নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে’ এবং আরো জানিয়েছে, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে অসংখ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

বাসাল বলেছেন, উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়ায় আরেকটি ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছে।

চলতি সপ্তাহে স্পেনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইউরোপীয় এবং আরব নেতারা ‘অমানবিক এবং ‘অর্থহীন’ যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, সাহায্যের ধারা যথেষ্ট নয়।
- ‘খোলা ক্ষত’ -

স্প্যানিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস রোববার ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি গাজায় ‘ব্যাপকভাবে, শর্তহীন এবং সীমাহীনভাবে এবং ইসরাইল যাতে বাধা দিতে না পারে’ সে পরিমাণ মানবিক সাহায্য প্রবেশের জন্য চাপ দিয়েছেন। এই অঞ্চলটিকে মানবতার ‘খোলা ক্ষত’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

জার্মানিতে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমি আর বুঝতে পারছি না যে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখন গাজা উপত্যকায় কী করছে, কোন লক্ষ্য নিয়ে তারা সেখানে এখনো নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে।’

তবুও, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেছেন, বার্লিন ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাবে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী সোমবার জানিয়েছে, ‘গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে বিমান বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে ২শ’ টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে’।

সেনাবাহিনী আরো বলেছে, তারা গাজা থেকে ইসরাইলের দিকে নিক্ষেপ করা তিনটি প্রজেক্টাইল শনাক্ত করেছে। দেশটি ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইলি যুদ্ধে শহরের পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টর দখলের বার্ষিক অনুষ্ঠান জেরুজালেম দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

গত সপ্তাহে ইসরাইল গাজার ওপর থেকে সাহায্য অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করেছে, যা খাদ্য ও ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি বাড়িয়ে তুলেছিল।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বেসামরিক বিষয় সমন্বয়কারী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা কোগ্যাট জানিয়েছে, সোমবার ‘খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধসহ মানবিক সহায়তা বহনকারী’ ১৭০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সোমবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন, ইসরাইল অবরোধ আরোপ করার পর থেকে সংস্থার কোনো চিকিৎসা সহায়তা বহনকারী ট্রাককে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

১১ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ‘চিকিৎসা সহায়তার জন্য কোনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেনি’, ‘হু’-এর পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় আঞ্চলিক পরিচালক হানান বালখি বলেছেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ’।

এছাড়াও সোমবার বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত গোষ্ঠী গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা এই অঞ্চলে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করেছে।

ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আগামীকাল আরো ট্রাক সাহায্য সরবরাহ করা হবে। সাহায্যের প্রবাহ প্রতিদিন বৃদ্ধি পাবে।

ইসরাইল গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর থেকে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩,৮২২ জন নিহত হয়েছে। যার ফলে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৫৩,৯৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঝিনাইদহে ৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে শ্রদ্ধা-ভালবাসায় প্রধান শিক্ষকের বিদায়
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম হাসপাতালে
ডাকসু প্রার্থী তালিকা প্রকাশ: বৈধ প্রার্থী ৪৬২ জন
যৌথ বাহিনী এক সপ্তাহের অভিযানে সারাদেশে আটক ৫৬
রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ৬৫ জন গ্রেফতার
চট্টগ্রামে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল: ফাওজুল কবির খান
এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি রোধে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চার নির্দেশনা    
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর-সংস্থার গতিশীলতা দরকার : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব
সিলেটে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান, ৩ জনের কারাদণ্ড
১০