২০৩০ সালের জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনে ‘ভালভাবেই এগোচ্ছে’ ইইউ: ব্রাসেলস

বাসস
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১৫:৩০

ঢাকা, ২৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৩০ সালের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ভালভাবেই এগোচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্রাসেলস। তবে ২০৪০ সালের জন্য নির্ধারিত আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী নিঃসরণ হ্রাস পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

বুধবার ব্রাসেলস থেকে এএফপি ইউরোপীয় কমিশনের এক বিবৃতির বরাতে জানায়, সদস্য দেশগুলোর আসন্ন বছরগুলোর শক্তি ও জলবায়ু পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে—১৯৯০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা কমিশনের ৫৫ শতাংশ লক্ষ্যের একেবারে কাছাকাছি।

তবে এই লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে ইইউকে এক কঠিন ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে ইউরোপীয় শিল্পখাতকে বাঁচিয়ে রাখা, অন্যদিকে রাশিয়ার হুমকি মোকাবেলায় প্রতিরক্ষা জোরদার করা এবং একইসঙ্গে দাবানল ও বন্যার মতো জলবায়ু দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইইউর জলবায়ুবিষয়ক প্রধান ভপকে হোকস্ত্রা বলেন, 'বিশ্ব বর্তমানে এক পূর্ণাঙ্গ ভূ-রাজনৈতিক শীতকালে রয়েছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও আমরা বলতে পারি, ভালো খবর আছে—ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জনের পথে ভালভাবেই এগোচ্ছে।'

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, 'কাগজে-কলমে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তব জগতেও প্রতিফলিত হতে হবে।'

কমিশন জানায়, ইতোমধ্যে ইইউ ১৯৯০ সালের তুলনায় ৩৭ শতাংশ নিঃসরণ হ্রাস করতে পেরেছে, যার মধ্যে শুধু ২০২৩ সালেই হ্রাস পেয়েছে ৮ শতাংশ।

ব্রাসেলস আরও জানায়, এখন বেশিরভাগ সদস্য দেশই ২০৩০ সালের মধ্যে মোট শক্তি ব্যবহারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ ৪২.৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে একমত।

তবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে নিঃসরণ হ্রাসের ক্ষেত্রে বিভেদ রয়ে গেছে এবং বন সংরক্ষণ ও কার্বন জমার বিষয়েও সমস্যা রয়েছে বলে জানায় কমিশন।

এক্ষেত্রে বেলজিয়াম, এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ডকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে—কারণ তারা এখনও নিজেদের শক্তি ও জলবায়ু পরিকল্পনা জমা দেয়নি। কমিশন তাদের তা “অবিলম্বে জমা দেওয়ার” আহ্বান জানিয়েছে।

ইইউর জ্বালানি কমিশনার ড্যান জোরগেনসেন বলেন, 'আমরা গর্বিত হওয়ার কারণ পাই ঠিকই, তবে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আমরা অনেক দূর এসেছি, কিন্তু এখনও গন্তব্যে পৌঁছাইনি।'

ইউরোপের জলবায়ু আন্দোলনের সংস্থা ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক’-এর জুলিয়া নার্দি বলেন, ২০৩০ সালের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হলেও বাস্তবায়নে জাতীয় পর্যায়ের কার্যকর নীতিমালা ও বিশ্বাসযোগ্য অর্থায়নের অভাব রয়েছে, যা হালনাগাদ পরিকল্পনাগুলোতেও প্রতিফলিত হয়েছে।

ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হতে চায়, এবং এর আগে ২০৪০ সালের জন্য একটি মধ্যবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে আগ্রহী ব্রাসেলস। কমিশন চায়, সে সময়ের মধ্যে নিঃসরণ ১৯৯০ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা হোক।

হোকস্ত্রা বলেন, 'আমাদের দৃষ্টিতে ২০৪০ সালের একটি স্পষ্ট লক্ষ্য এবং পূর্বানুমানযোগ্যতা অত্যন্ত জরুরি।'

তবে এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে এবং কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ৯০ শতাংশ হ্রাসের প্রস্তাব পেশ করেনি।

চেক প্রজাতন্ত্র ও ইতালির মতো কিছু দেশের কাছে এই লক্ষ্য অবাস্তব মনে হচ্ছে।

কমিশন ২০৪০ সালের হিসাব গণনায় আরও নমনীয়তা আনার কথা ভাবছে—যেমন আন্তর্জাতিক বাজারে কার্বন ক্রেডিট কেনার সুযোগ রাখা।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রীষ্মের আগেই একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করা হবে এবং আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)-এর জন্য ইইউ প্রস্তুত থাকবে। আগামী নভেম্বরে এ সম্মেলন ব্রাজিলের অ্যামাজন শহর বেলেমে অনুষ্ঠিত হবে।

যদিও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দেরি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। তাদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ইউরোপকে নেতৃত্ব দিতে হবে—বিশেষ করে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে গিয়ে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

তারা ইউরোপীয় গ্রিন ডিল পুরোপুরি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে। এই কর্মসূচিই ছিল কমিশনপ্রধান উরসুলা ফন ডের লায়েনের প্রথম মেয়াদের বড় সাফল্য; তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা অনেক বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছে।

কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার কিছু মাসের মধ্যেই প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর উদ্যোগ নেয়। ডানপন্থীদের উত্থানে ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে যাওয়ার ফলে ব্রাসেলস অনেক পরিবেশগত নিয়ম-কানুন শিথিল করেছে। ফ্রান্স ও জার্মানি এসব নিয়ম পুরোপুরি বাতিলের দাবিও জানিয়েছে। এছাড়া বন ধ্বংসরোধী আইন বাস্তবায়নেও বিলম্ব করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে সার্ক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এআই জেনারেটেড ডিপফেক ভিডিও এড়িয়ে চলার অনুরোধ
মোস্তফা মোহসীন মন্টু’র দাফন সম্পন্ন : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন
সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৬৩৬ জন
বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান তদারকিতে ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন
৫৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি : এ টি এম মাসুম
গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিএনপি'র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে মনোনয়ন
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সাথে ডব্লিউজিইআইডি’র প্রতিনিধি দলের বৈঠক
গুমের ঘটনায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখেছে কমিশন
১০