শিরোনাম
ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্র বুধবার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক দ্বিগুণ করায় প্যারিসে চলমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্রতর বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাণিজ্য নীতির আওতায় মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের ওপরই আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে স্টিল ও গাড়ি শিল্প। এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে এবং অনেক দেশ এখন শুল্ক এড়াতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) জানিয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় তারা গ্লোবাল প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেই সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সংস্থারটির প্রধান অর্থনীতিবিদ আলভারো পেরেইরা।
এই প্রেক্ষাপটে, প্যারিসে মঙ্গলবার ও বুধবার চলছে ওইসিডি-এর বার্ষিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করছেন। যাতে নতুন করে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক না আরোপ করা হয়।
একইভাবে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য মন্ত্রী জোনাথন রেইনল্ডস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের আলোচনায়, রেইনল্ডস এবং গ্রিয়ার "চুক্তিটি দ্রুত বাস্তবায়নের যৌথ ইচ্ছা" প্রকাশ করেন, যার মধ্যে বিভিন্ন খাতে শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তিগুলোও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একটি যুক্তরাজ্য সরকারের বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যদিও বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আপাতত ২৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকবে। কারণ দুই দেশ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় কোটা ও শুল্ক নির্ধারণে কাজ করছে। কিন্তু ট্রাম্পের সর্বশেষ পদক্ষেপ বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা ট্রাম্পের ধাতব পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে সতর্ক করেছে যে, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সময়সীমা ঘনিয়ে আসছে: গ্রুপ অব সেভেন (জি৭) উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র — বুধবার বাণিজ্য নিয়ে পৃথক আলোচনা করেছেন।
জার্মান অর্থনীতি মন্ত্রী ক্যাথেরিনা রাইখে মঙ্গলবার ওইসিডিৎর আলোচনার ফাঁকে বলেন, আমাদের যত দ্রুত সম্ভব সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধানে পৌঁছাতে হবে। কারণ সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
ফরাসি বাণিজ্যমন্ত্রী লরঁ স্যাঁ-মারতাঁ বলেন, ‘আমাদের শান্ত থাকতে হবে এবং সবসময় দেখাতে হবে যে এই শুল্ক আরোপ কারো স্বার্থে নয়।’
মেক্সিকো বাড়তি শুল্ক থেকে অব্যাহতি চাইবে বলে জানিয়েছেন দেশটির অর্থনীতি মন্ত্রী মার্সেলো এবরার্দ।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোতে যতটা রপ্তানি করে, তার তুলনায় আমদানি কম, তাই, এমন পণ্যে শুল্ক আরোপের কোনও যুক্তি নেই। মেক্সিকো ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তাদের ৮০ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
মঙ্গলবার, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন যে, বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে বুধবারের মধ্যে প্রস্তাব পাঠাতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারণ এর সময়সীমা ঘনিয়ে এসেছে।
চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি, ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানসহ বহু অর্থনীতির উপর উচ্চ হারে শুল্ক ঘোষণা করেন। যার লক্ষ্য ছিল যেসব বাণিজ্যনীতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অন্যায্য, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা।
এই উচ্চ শুল্ক হারগুলো ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল, তবে এই স্থগিতাদেশ ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে।
এদিকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে। এই বছর ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন, যার জবাবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
মে মাসে উভয় দেশ সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমাতে রাজি হয়েছিল। তবে ট্রাম্প চীনকে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-অর্থমন্ত্রী মাইকেল ফকেন্ডার সোমবার সিএনবিসি’কে বলেন, সমস্যাটি ছিল ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট রপ্তানিতে চীনের অনুমোদন বিলম্ব’ করা। তবে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় ভালো অগ্রগতি হচ্ছে।
