ঢাকা, ১২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : পোল্যান্ডের ইইউ-পন্থী সরকার গতকাল বুধবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে জয়লাভ করেছে। কারণ, তারা চলতি মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পাওয়ার প্রমাণ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে।
জাতীয়তাবাদী ক্যারল নওরোকি প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের ডাকা এই আস্থা ভোট কিছু বিশেষজ্ঞকে আগাম নির্বাচনের ভবিষ্যদ্বাণী করতে উৎসাহিত করেছিল।
ওয়ারশ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বুধবারের শুরুতে টাস্ক সংসদ অধিবেশনের শুরুতে বলেছিলেন, ‘আমি আস্থা ভোটের জন্য আবেদন করছি কারণ আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবং আস্থা আছে যে আমরা আস্থা ভোটে জয়লাভ করে আমাদের দেশের শাসন ক্ষমতা আমাদের হাতেই থাকবে।’
তিনি আরো বলেছেন, সরকারকে ‘খুব কঠিন, গুরুতর কিছু কাজের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যা টাস্কের সফলভাবে করতে পেরেছিল।’
সরকারের একটি সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন ছিল এবং কয়েক ঘণ্টার সংসদীয় বিতর্কের পর, ৪৬০ আসনের পার্লামেন্টে ২৪৩ জন সংসদ সদস্য টাস্কের পক্ষে ভোট দেন।
কিন্তু আগস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন ভক্ত নওরোকি যখন শপথ নেবেন, তখন তিনি এক কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হবেন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, নওরোকি সরকারকে বাধাগ্রস্ত করার এবং তাকে সমর্থনকারী প্রধান বিরোধী ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস’ (পিআইএস) দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করবেন।
ইইউ’র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট টাস্ক ২০২৩ সালে তার মধ্যপন্থী সিভিক প্ল্যাটফর্ম, পোল্যান্ড ২০৫০, পোলিশ পিপলস পার্টি (পিএসএল) এবং নিউ লেফটের জোটের প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন।
২০২৭ সালের আগে নতুন সংসদীয় নির্বাচন হওয়ার কথা নয়।
- ‘জোটের টানাপোড়েন’ ু
নওরোকি ১ জুনে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন্ তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ারশ মেয়র রাফাল ত্রজাস্কোস্কি পেয়েছিলেন ৪৯ শতাংশ ভোট।
মধ্যপন্থী ত্রজাস্কোস্কিকে সমর্থনকারী টাস্ক এমন ফলাফল সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু শাসক জোটের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বিশেষ করে পিএসএলের সাথে যারা সামাজিকভাবে রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে এবং অভিবাসনের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ চায়।
৩ কোটি ৮০ লক্ষ জনসংখ্যার পোল্যান্ড, ইইউ এবং ন্যাটোর সদস্য। একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে এটি একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হয়ে উঠেছে।
পোলিশ প্রেসিডেন্টদের বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতিতে কিছুটা প্রভাব রয়েছে তবে তাদের মূল ক্ষমতা হল সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া আইন ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা।
এটি সম্ভবত টাস্ক সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। যেমন সমকামী অংশীদারিত্বের পরিকল্পিত প্রবর্তন বা গর্ভপাতের ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা।
আন্তর্জাতিকভাবে, এটি ব্রাসেলসের সাথে সম্পর্ককে কঠিন করে তুলতে পারে বিশেষ করে আইনের শাসনের বিষয়গুলোতে। নওরোকি পূর্ববর্তী পিআইএস সরকার কর্তৃক গৃহীত বিতর্কিত বিচারিক সংস্কারগুলোকে সমর্থন করেন।
ইউক্রেনের সাথে সম্পর্ক আরো উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে কারণ, নওরোকি ন্যাটোতে কিয়েভের সদস্যপদ গ্রহণের বিরোধিতা করেন এবং পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সমর্থনের সমালোচনা করেন।
আদালত ফলাফল যাচাই করার পর নওরোকি ৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে তার পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন কিছু জেলায় নওরোকির পক্ষে গণনায় ত্রুটির প্রমাণ পেয়েছে।
বুধবার টাস্ক ‘নির্বাচনে সম্ভাব্য ক্ষমতার অপব্যবহার বা জালিয়াতির’ কথা বলেছেন কিন্তু তার সরকার ‘অবশ্যই ফলাফলকে সম্মান করবে।’